মনি শংকর বেপারী,(বাগেরহাট):
আত্মা এক কায়া দুই,
তারে আমি বন্ধু কই।
হিন্দু শাস্ত্রমতে বন্ধুত্বের একটা সংঙ্গা আছে, যাদের আত্মা তথা চেতনা এক,কায়া তথা শরীর ভিন্ন,বিদ্যমান রক্তের চেয়ে উত্তম সম্পর্ক, উহারা পরস্পরের বন্ধু।বন্ধুত্বে কাল পাত্রের ভেদ নেই,এতে থাকবে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা ,হাসি, কান্না, সহযোগিতার ভাগাভাগি। বন্ধুত্ব সারাজীবনের জন্য, সাময়িক নয়। কেউ যদি সাময়িক ভাবে,তাহলে সেটা কখনোই বন্ধুত্ব ছিল না,থাকবে না। তবে, মতবিরোধ থাকবে না তা নয়।কিন্তু তা হতে হবে কমা(,) এর মত।অর্থাৎ,একটা বাক্যের অনেক অংশ হলে ভাব প্রকাশের জন্য কমার ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু কমা ব্যবহারের পরক্ষণেই নতুন শব্দ লিখে বাক্য দাড়ি ব্যবহারে শেষ করতে হয়।তেমনি মতবিরোধ হলে ঐখানেই না থেমে,আলোচনা সাপেক্ষে মত এক করে দাড়ির মত আমৃত্যু বন্ধুত্ব স্থায়ী করা কর্তব্য। যারা বন্ধুত্বে সাহায্য নয়, সুযোগ খোঁজে তারা প্রকৃত বন্ধু নয়।আর যারা এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাসঘাতকতা করেছ,তারা কাট।কেটে পড়,সঙ্গ ছাড়। যারা বন্ধু সেজে অধিক চতুরতা দেখিয়ে কথা দিল,কিন্তু না রেখে বরং ভাঙল তাদের ত্যাগ কর।এরা থুথু নিক্ষেপ করে আবার তুলে নেয়ার নামান্তর। মহাভারতে অর্জুন-শ্রীকৃষ্ণ আর কর্ণ-দুর্য্যধন এদের বন্ধুত্ব ছিল প্রগাঢ়,কিন্তু ভাবটা ভিন্ন।একটা প্রকৃত অন্যটা মেকি।মহর্ষি ব্যাস লিখিত মহাভারতে কর্ণ তার মৃত্যু সময়ে কুন্তীর কাছে স্বার্থ বিষয়টি নিশ্চিত করে গেছেন।জীবনের যাবতীয় অভিব্যক্তি অন্য কারো কাছে প্রকাশ করা না গেলেও বন্ধুর কাছে প্রকাশ করা যায়।তবে বন্ধু বিশ্বস্ত হওয়াটা জরুরি। তোমার কাছে যদি সে বিশ্বস্ত হয়,কিন্তু তার নিজের স্বার্থে তোমার বিশ্বাস চুরি করে, তবে নিমেষেই তাকে ত্যাগ কর এবং নিজের ধর্ম রক্ষা কর।
জীবনে বেঁচে থাকতে প্রকৃত বন্ধু থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।অ্যারিস্টটল বলেছেন, "দুর্ভাগ্যবান তারাই যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই।" কেউ কি চায় নিজেকে দুর্ভাগ্যবান করে রাখতে?নিজেকে দুর্ভাগ্যবান কথাটি থেকে অব্যহতি দিতে প্রকৃত বন্ধু আবশ্যক। এপিজে আবুল কালাম বলেন "একটি বই ১০০ বন্ধুর সমান,কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটা লাইব্রেরির সমান।" মহাবিশ্বের বিভিন্ন দার্শনিক বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন এবং জাতির কাছে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছেন। শিবরাম চক্রবর্তী বর্তমান কালের বন্ধুত্বকে বন্ধুত্ব বলতে অস্বীকার করেছেন,তিনি একে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, এনিমি ও নন এনিমি। নন এনিমিকেই এখন বন্ধু বলতে হয়।আর প্রকৃত বন্ধু তো হাফপ্যান্ট পরা সময়ে পাওয়া যায়।বন্ধুত্বে স্বার্থ আর সাহায্য সমবেদনা যেন এক অর্থ না হয়। এখানে উভয়কেই পরস্পরের মিথোজীবী হতে হয়।আগুনের ধর্ম জ্বলা এবং তা রক্ষা করতে যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন,তেমনি মানুষের ধর্ম তথা বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে বন্ধু আবশ্যক। আর বন্ধুত্ব রক্ষা করতে জ্ঞান ও বিশ্বাস প্রয়োজন।অন্যথায় জীবনের মাহাত্ম্য উপলব্ধি সহজ তথা সম্ভব নয়।
বন্ধুত্বের স্বরূপ।
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, মে ৩১, ২০২০
Rating: 5
