জেবা সামিহা তমা,(রংপুর):
" ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই? "
শামসুর রহমানের এই কবিতা আমরা ছোটবেলায় পড়েছিলাম। কিন্তু এই কবিতা পড়ে মনে প্রশ্নরা উঁকি দিচ্ছে সত্যি তো ট্রেনের বাড়ি কোথায়? ট্রেনের পথচলা শুরু কবে থেকে? কোথা থেকে?
ইতিহাসকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিবে ট্রেনের বাড়ি যুক্তরাজ্যে। কারণ প্রথম ট্রেনের জন্ম হয় যুক্তরাজ্যে এবং সেখানেই প্রথম ট্রেন চলা শুরু হয়। তবে ট্রেনের বাড়ি যুক্তরাজ্যে হলেও ট্রেন শব্দটি প্রাচীন ফরাসী শব্দ ট্রাহিনার থেকে এসেছে যা ল্যাটিন ট্রাহিয়ার (অর্থ টানা, টানিয়া আনা) থেকে উদ্ভূত।
১৭৮৯ সালে (William Jessup) নামে একজন ইংরেজ ব্যক্তি Flang Cakar Train এর নকশা করেন। পরে Richard Trevithick নামে একজন ব্রিটিশ আবিষ্কারক প্রথম ইঞ্জিন চালিত রেলগাড়ি তৈরি করেন। ১৮০৪ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি ৭০ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রেন যুক্তরাজ্যের Pen-Y-Darren শহর থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে এবং দুই ঘন্টার মধ্যে ৯ মাইল দূরে একটি ষ্টেশনে পৌঁছায়
ব্রিটিশদের অধীনে থাকার কারণেই ভারত উপমহাদেশে ট্রেন পৌঁছাতে দেরি হয়নি বোধহয়।
উনবিংশ শতাব্দীতেই ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে ছোট ছোট রেলপথ সেকশন করেন। প্রথমদিকে রেলযোগাযোগ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হতো।
১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ প্রথম রেলওয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক একটি ব্রিটিশ কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার জাগতী পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করেন যার মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশে রেলযোগাযোগ চালু হয়৷ এটি ছিলো ৫৩.১১ কিলোমিটার ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ( ১৬৭৬ মি.মি.) এর একটি ব্রডগেজ লাইন। এরপর ১৮৮৫ সালের ৪ জানুয়ারি ১৪.৯৮ কিলোমিটার ৩ ফুট ৩৩/৮ ইঞ্চি (১০০০ মি.মি.) মিটারগেজ লাইন স্থাপিত হয়।
বিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত রেলইঞ্জিনগুলো ছিলো বাষ্পচালিত। বর্তমানে ডিজেল ও বৈদ্যুতিক ট্রেনের ব্যবহার বেশি। বাংলাদেশে ডিজেল চালিত ট্রেন রয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে রাজধানীর যানজট নিরসনের জন্যে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল। ট্রেনের হালনাগাদ করতে বাঙ্গালির অবদান কিছু কম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আতাউল করিম আবিষ্কার করেছেন ভাসমান ট্রেন। অর্থাৎ ট্রেনটি চলার সময় ভূমি স্পর্শ করবে না।
প্রতিনিয়ত ট্রেন তার চলার পথে হচ্ছে উন্নত। আশ্চর্যের বিষয় এই যে সময়ের সাথে ট্রেনের দ্রুততা পাল্লা দিচ্ছে উড়োজাহাজকে। তবে ট্রেনের জন্মস্থান যুক্তরাজ্যে হলেও বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে চীনে।
সাংঘাই ম্যাগলেভ (Sanghavi Maglev) নামের বিশ্বের দ্রুততম ট্রেনটি প্রতি ঘন্টায় ২৬৭.৮ মাইল বেগে চলে। ট্রেন এবং ম্যাগনেটিক ট্যাকের মধ্যে যে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয় তাতেই চলে এ ট্রেনটি। ২০০৪ সাল থেকে ট্রেনটি লং ইয়ার্ড রোড থেকে পুডং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রুটে চলাচল করে মাত্র সাত মিনিট বিশ সেকেন্ডে।
প্রথম দিকে ট্রেন শুধু ব্যবহৃত হয়েছে মানুষের দূরবর্তী পথ সহজ করার জন্যে কিন্তু বর্তমান জনবহুল বিশ্বে উন্নত ট্রেন সাশ্রয় করছে ব্যস্ত মানুষের শ্রমঘন্টা। হয়তো বিজ্ঞানের আরো ছোঁয়ায় ট্রেন পৌঁছে যাবে মানুষের কল্পনার অসীমে।
ফিচার: ট্রেনের শুরু থেকে শেষ।
Reviewed by সম্পাদক
on
শনিবার, ফেব্রুয়ারী ০৮, ২০২০
Rating:
