গল্প: প্রশান্তি
লেখা: জান্নাতুল ফেরদৌস মারিয়া।
এইতো কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।প্রতিদিনের মতো তৈরি হয়ে গেলাম।অন্যান্য দিনের মতো আজকে রিকশায় উঠলাম না।ভাবলাম হেঁটে যাই।সকাল বেলা আমার হাঁটতে ভালো লাগে।বাসা থেকে কলেজ তেমন একটা দূরে না।তাও বাবা যাওয়া-আসার জন্য রিকশা ভাড়া দেয়।যাই হোক আজকে সকালে হাঁটতে ভালোই লাগছে।কলেজ শুরু হবে ১০ টায়।আমি আজকে এক ঘন্টা আগেই বের হয়েছি।বাসা থেকে কলেজ পর্যন্ত হেঁটে যেতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে।হাতে অনেকটা সময়ও আছে।রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকটা পথ হাঁটার পড়ে কলেজের একটু কাছেই একটা হোটেল।হোটেলের সামনে দেখলাম একটা ছোট মেয়ে(বয়স ৭ কি ৮ হবে) ফুল বিক্রি করছে।মেয়েটাকে দেখে কেনো জানি না মায়া হলো।মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম
-তোমার নাম কি?
-আমার নাম সাথী।একটা ফুল নিবেন?সকাল থেকে একটা ফুলও বিক্রি হয় নাই।
-কিছু খেয়েছো সকালে?
-না, এখনো টাকা কামাই করা হয় নাই, তাই কিছু খাই নাই।
-ক্ষুদা লাগে নি বুঝি?চলো আমার সাথে,কিছু খাবে আসো...
-না আমি খাবো না।সারমিন কিছু খায় নাই।সে আমাকে ছাড়া খায় না।আমিও ওকে ছাড়া খাই না।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে এই ৫ টা ফুল দাও।
(এপ্রোনের পকেটে ১০০ টাকা ছিলো।বের করে সাথীর হাতে দিলাম) কিছু কিনে খেও।তোমরা কয় ভাই বোন?থাকো কোথায়?বাবা-মা কি করে?"
-আমার একটা বোন আছে।নাম সারমিন।সে ময়লা কুড়ায়।আমরা দুই জন ষ্টেশনে থাকি রাতে।আমার বাবা- মা আমাদের ষ্টেশনে রেখে কোথায় যেন গেল আর ফিরে আসল না।
-আচ্ছা চলো আমার সাথে কিছু খাবার কিনে দেই। সারমিনের জন্য নিয়ে যাও। দুই জনে মিলে খেও।
সাথীর চোখ উজ্জ্বল হয়ে গেল।আমি পাশের হোটেল থেকে কিছু নাস্তা কিনে খাবারের প্যাকেট ওর হাতে দিলাম।
-আপু তোমার নাম কি?
-আমার নাম চৈতি।তোমার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কলেজে এসো। দারোয়ান আঙ্কেলকে বলবে চৈতি আপুর সাথে দেখা করব।উনি আমাকে ভালো করেই চিনেন।কলেজ তো চিনোই।অই যে হাঁটলে সামনে গেইট দেখা যায়, ওইটা আমার কলেজ গেইট।আর পারলে ২ টার দিকে এখানে থেকো। আমার কলেজ ছুটি হলে তোমাকে আমার বাসা চিনিয়ে দিবো।পারলে সারমিনকে নিয়ে এসো।
ওর মুখে হাসি ফুটলো।সাথী আমার হাত ধরে আমাকে নিচে বসালো আর বললো "আপু তুমি অনেক ভালো"।আমি একটু হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
কলেজের সময় হয়ে গেছে।সময় কম থাকায় সাথীর সাথে বেশি সময় কাটাতে পারলাম না।
আমি হাঁটছি আর মনে মনে ভাবছি,"রাস্তার পাশে আজকেও সাথী-সারমিনের মতো কত পথশিশু না খেয়ে রাত কাটায়!"ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু মনের মাঝে আজকে কোথায় যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করছে সাথীর মুখে হাসি ফুটাতে পেরে।ওর মুখের হাসিতে কেমন যেনো একটা অন্যরকম প্রশান্তি ছিলো।
গল্প: প্রশান্তি ।
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০২০
Rating:
