নাবিলা আক্তার,(ঢাকা):
ফুটবল খেলার শুরুটা হয় ইংল্যান্ডে ১৮৬৩ আর এর ফুটবলের আধুনিক নিয়ম-কানুন তৈরি চীনে।
আমরা সবাই কম বেশি হলেও ফুটবল নিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে থাকি কিন্তু সেটার ৮০/৯০% হয় ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। যদিওবা বাংলাদেশ এখনো ফুটবল বিশ্বকাপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নি। তবুও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি কম না।
তবে সেই তুলনায় দেশীয় ফুটবলের অবস্থা নিরুত্তাপ।
তবে আমাদের দেশের ফুটবলের অতীত টা ভালো ছিলো ১৯৮০থেকে ১৯৯০ দশকের সময়টায় । সেই সময়টাকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ফুটবলের মোহামেডান যুগ। যদিও তখন আবাহনী ব্রাদার্স ইঊনিয়নের মতো জনপ্রিয় দল ছিলো। জনপ্রিয় খেলোয়াড়ে ছিলো ভরা তাদের মাঝে কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না, সাব্বির, রুমির, কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের মতো খেলোয়ার রা।
তখন ফুটবল খেলা দেখার জন্য ছিলো উপচে পড়া ভিড়, টিকিট পেতে পোহাতে হতো অনেক খনি বেগ আর ঘরে ঘরে সবাই টিভি সেটের সামনে বসে পড়তো আবার চায়ের দোকানে মানুষ ভিড় করে খেলা দেখতো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং ১৯৭৪ সালে ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। তবে এতদিন পর্যন্ত অর্জনটা খুবিই কম।
এবার একটু ঘরোয়া ফুটবলের দিকে দেখা যাক,বাংলাদেশে প্রায় ৪১০০ ফুটবল খেলার ক্লাব তার মাঝে পেশাদার ক্লাব রয়েছে ৩১ টি। ঘরোয়া ফুটবল বলতে দুটো দলের নাম মাথায় চলে আসে সেই মোহামেডান আর আবাহনী।
![]() |
আবহনী-মোহামেডানের খেলা মানেই ছিল উত্তেজনা ভরপুর।ছবি: সংগ্রহ |
ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব স্থাপিত হয় ১৯৩৬ সালে ঢাকার হাজারি বাগে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে এক শুন্যতার সৃস্টি হয়, এই ক্রান্তিকালে কলকাতা মোহামেডানের বিখ্যাত ফুটবলার মোহাম্মাদ শাহজাহান ঢাকায় চলে আসেন ও ঢাকা মোহামেডানের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেন। তিনি ঢাকা মোহামেডানকে সুসংগঠিত ও পুর্নগঠিত করেন, ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার ফুটবলে একক প্রাধান্য ছিল ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবের।
সেই সময়টাতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা খেলেছে ভারতের ইস্ট বেঙ্গল, মোহন বাগান ও কলকাতার মোহামেডান ক্লাবে।
অনেক সোনালী অতীত রয়েছে ঘরোয়া ফুটবলের। তখন জাতীয় দলও অনেক সাফল্য অর্জন করেছিল। কিন্তু হঠাত করেই তা স্থবির হয়ে যায়।
তারপর মাঝে দর্শকের দৃষ্টি কারে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল । আর ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়া এইদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষন হচ্ছে এতে করে স্পন্সরা সব এখানে তাদের স্পন্সর করছে। অন্যদিকে ফুটবলে স্পন্সর কারি কোম্পানি তেমন নেই বললে চলে। আবার বাফুফের দূর্নীতিও ফুটবলের অবনতির প্রধান একটি কারণ।আবার সঠিক ভাবে দেশের ফুটবলের খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার কারনে অনেক খানি ঝড়ে পড়ছে আমাদের দেশের ফুটবলের সোনালী ইতিহাস। ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ তলানিতে থাকলেও বিদেশি কোচ বদলানোতে বাংলাদেশ সেরা। এটিও বাংলাদেশের ফুটবলের এই অবস্থার জন্য একটি বড় কারণ।
তবে এত কিছুর মধ্যেও ভালো সংবাদ হলো-
বর্তমানে বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের গতি দেখার মতো তৈরি হচ্ছে । সম্প্রতি সাফ অনূর্ধ্ব ১৫ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ১-০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ।
এর আগে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন্সের নারী অনূর্ধ্ব ১৪ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা।
২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিপক্ষ হিমালয়কন্যাদের(নেপাল) ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ আসরের প্রথম চ্যাম্পিয়ন (অপরাজিত) হয়ে নিজেদের নাম ইতিহাসের পাতায় উঠিয়ে রাখে বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৮ সালের আগস্টে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের মেয়েদের জয় ৩-০ গোলে। এবারের টুর্নামেন্টেও গ্রুপ পর্বে জিতেছিল ২-১ গোলে।
![]() |
মেয়েদের ফুটবলের সুসময়। ছবি: সংগ্রহ |
![]() |
বসুন্ধরা কিংস। ছবি: সংগ্রহ |
বর্তমান যুবসমাজ ক্রীড়াবিমুখ হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল আশীর্বাদ মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সহজলভ্যতা সবাইকে করেছে ব্যতিব্যস্ত। তারা খেলাধুলার চেয়ে ফেইসবুক-ইউটিউবেই বেশি সময় ব্যয় করছে। বর্তমান হালের এ ডিজিটাল ছোঁয়া ফুটবলকে কিছুটা হলেও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। কারণ আগের ছেলেপুলেরা যে যেখানেই থাকুক বিকাল হলেই মাঠপানে ছুটে চলত, আর আজকালকার যুবসমাজকে পথপরিত্যক্ত জায়গায় মাথা নিচু করে মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ফুটবলে ধস নামার কারণ যে শুধু তা-ই, তা নয়, শহর-গ্রাম সবখানেই মাঠ দখল করে শিশু-কিশোরদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ক্রীড়াহীনতার পথে। দিনদিন এভাবে যদি খেলাধুলার উর্বর ক্ষেত্রকে বিলীন করা হয় তাহলে ফুটবল পরিণতি বর্তমান সময়ের চেয়ে আরও উদ্বেগজনক পথেই এগিয়ে যাবে বৈকি। এছাড়া দেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। পল্লী অঞ্চলের ফুটবলকে কীভাবে আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায় সে পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ফুটবলের উর্বর ক্ষেত্র হচ্ছে গ্রামাঞ্চল। সে গ্রামকে বাদ দিয়ে ফুটবল চিন্তা করলে সেটা হবে ফুটবল বিলীনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আজকের নারী ফুটবলের জাগরণী উত্থান তো গ্রাম হতে এসেছে। অজোপাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা সংগ্রামী জীবন তাদের। অভাব-অনটনে কাবু নিঃস্ব পরিবারের সন্তান ওরা। ঢাকায় ওই স্বর্ণকিশোরীরা যখন পরম আতিথেয়তায় সময় পার করে, বাড়িতে গিয়ে সেই ততটুকু অভাব যন্ত্রণায় পিষ্ট হতে হয় সদ্য চ্যাম্পিয়ন ফুটবল বাঘিনীদের। বিজয়ের রং যতদিন উজ্জ্বল থাকে ততদিনই হয়তো তাদের আদর-আপ্যায়নে মাতিয়ে রাখা হয়। আর বিজয়ের রং ধূসর হলেই তলিয়ে যায় ওদের সম্মানটুকু। ক্রিকেটে যেভাবে ক্রিকেটারদের যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়, ফুটবলে তার কানাকড়িও পায় না, এমন অভিযোগ তাদের কাছে সর্বদাই পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে যদি সঠিক ভাবে পরিচর্চা করা হয় এবং তাদের শারীরিকভাবে শক্তি বাড়ানোর জন্য দরকার সঠিক শরীরচর্চা। সেই সাথে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া হয় এবং সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোশকতার দেয়া হয় তাহলেও খেলোয়াড়রা তাদের খেলার আগ্রহ পাবে। তদের বেতন নিয়ে তাদের অভিযোগ শুনা যায় তাদের যদি সঠিক বেতন দেয়া হয় তারা তাদের খেলায় আরো বেশি আগ্রহ সহকারে খেলতে পারবে... তাছাড়াও এই বেপার নিয়ে সবার মাঝে আগ্রহ তৈরি করার মতো পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে এবং বাংলাদেশের সম্ভবনাময় কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলার পরিবেশ গড়ে তুলে দিতে হবে। এসব বেপার একটু সর্তক হলেই দেশের ফুটবলের সোনালী অতীত আবার ফিরে আসার সম্ভবনা আছে। দেশের মানুষের নিজ দেশের ফুটবলের উপর আরো একবার ভালোবাসা তৈরি হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানের খেলার গতি যদি ধরে রাখতে পারে ফুটবল খেলোয়াড়রা তবে আমরা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেশকে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলায় অংশগ্রহণ ও করতে দেখবো।
[নতুন নতুন গল্প,কবিতা,ছড়া,ফিচার সহ শিশু-কিশোরদের লেখা সৃৃজনশীল লেখাগুলোর আপডেট পেতে ক্লিক করুন]
বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালী সময় কি আবার ফিরে আসছে?
Reviewed by সম্পাদক
on
বুধবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
Rating:
