জেবা সামিহা,(রংপুর):
মানবসন্তান জন্মসূত্রে মানুষ না হলেও জন্মের পর থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত অধিকার পেতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়লে বেঁচে থাকার অধিকার যেনো সবকিছু থেকেই প্রয়োজন হয়। কিন্তু শিশু অবস্থায় অধিকার হারাতে থাকলে মানবসন্তান কি পারে মানুষ হয়ে বাঁচতে শিখতে?
এবারের আন্তর্জাতিক শিশু পুরস্কার পান দুজন। তাদের মধ্যে একজন গ্রেটা থানবার্গ ও অন্যজন ডিভিনা মালোম। গ্রেটা আগামীর পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনের নেত্রী আর ডিভিনা মালোম লড়াই করছেন শিশু অধিকারের জন্যে।
শিশু বয়সে কি বা অধিকার থাকতে পারে? অন্ন, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার। এই তো? তারপর? একটা সঠিক পরিবেশ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু যেখানে শিশুর মৌলিক অধিকার অনিশ্চিত সেখানে সঠিক পরিবেশ লাখো শিশু চোখের স্বপ্ন মাত্র।
২০১৪ সালে ডিভিনা মালোম ক্যামেরুনের উত্তরে পরিবারসহ বেড়াতে যায় এবং দেখতে পান সেখানকার শিশুদের উপর মৌলবাদের এবং হিংস্র চরমপন্থার প্রভাব।
তারা শিশুদের পরিবার থেকে তাদের পৃথক করে শিশু সৈন্য হিসাবে শোষণ ও অপব্যবহার করে। ডিভিনা সেখানে বাল্যবিবাহ ও শিশু আত্মঘাতী হামলার সাক্ষীও হলো। নিজ দেশের শিশুদের এতো দুঃসহ অবস্থা দেখে তাদের জন্যে কাজ করার সিন্ধান্ত নেয় ডিভিনা। ডিভিনা বাড়ি ফিরে ক্যামেরুনের উত্তর অঞ্চলের গল্প ছড়িয়ে দিয়ে “আমি শান্তির জন্য দাঁড়িয়ে আছি” প্রচার শুরু করে।২০১৫ সালে ডিভিনা শিশুদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং টেকসই উন্নয়নে বাচ্চাদের অংশগ্রহণ প্রচার করতে, শিশুদের জন্য শান্তির (সি 4 পি) আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ডিভিনা বিশ্বাস করে যে শিশুরা শান্তির আসল বাহক এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর সর্বোত্তম উপায় হলো শিক্ষা।
বিশ্ব শান্তির এ সময়ে ক্যামেরুন একাধিক দ্বন্দ্বের কবলে। ২০১৪ সালের মে থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সন্ত্রাসবাদী হামলা তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং পশ্চিমের মধ্য আফ্রিকান সংকট থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শরণার্থী এসেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা সম্প্রতি তাদের নিজস্ব রাজ্যের জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিল।
ক্যামেরুনের কিছু অংশে, শিশুরা প্রতিদিনের ভিত্তিতে সহিংস চরমপন্থা অনুভব করে। সন্ত্রাসী হামলার শিকার হিসাবে তারা প্রাণ হারায়, আহত হয় বা আঘাতজনিত হয় এবং তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। শিশুরা তাদের গ্রামগুলি মাটিতে পুড়ে গেছে এবং পরিবারগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। স্কুলে যাওয়া এখন আর বিকল্প নয়। সন্ত্রাসবাদী দলগুলি দুর্বল শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করে এবং তাদেরকে শিশু সৈনিক এবং শিশু নববধূ হওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়।
ক্যামেরুনে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং উপভাষার মিশ্রণ রয়েছে। ডিভিনা তাই হিংসাত্মক চরমপন্থার ভয়াবহতা বর্ণনা করে কার্টুন তৈরি করেছে। কার্টনগুলি মৌলবাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। শান্তির জাতীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাষা বাধা একটি বিষয়। ডিভিনা ব্যক্তিগতভাবে সহিংসতার শিকার শিশুদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন এবং তার দলের সাথে, তিনি তাদের গল্পগুলি কার্টুনগুলিতে সবার সাথে বোঝার জন্য অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এখনও অবধি ডিভিনা তিন হাজারেরও বেশি কার্টুন বিতরণ করেছে। ডিভিনাও কার্টুনগুলিকে শান্তির বিষয়ে অর্থপূর্ণ কথোপকথনের ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করে। রাজধানীর নিজের স্কুল এবং কোরানিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, তিনি রাস্তার শিশু, সংঘাতের শিকার এতিম শিশু এবং উত্তরের পল্লী অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরও দেখতে যান।
ডিভিনা শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং তার সহকর্মীদের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে কথা বলতে রাজধানীতে পদযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ডিভিনা শিশুদের শক্তি বোঝে। তিনি শিশুদের উচ্চ আক্ষরিকভাবে কথা বলতে, এবং বিশ্বাস করতে যে তাদের কন্ঠস্বর শোনা উচিত শেখায়।
১৫ বছর বয়সী ডিভিনা মালোম ক্যামেরুনের ১০টি অঞ্চলে ১০০ জন স্থায়ী সদস্যদের যুব-নেতৃত্বাধীন একটি তৃণমূল গড়ে তুলেছেন, যাকে চিলড্রেন ফর পিস বলা হয়। তারা একসাথে ১বছরে ৫০০০ এর বেশি বাচ্চাদের সিন্ধান্ত নিতে শেখায় যে, তারা সহিংসতাকে না করতে পারে এবং স্থায়ী শান্তি বজায় রাখতে পারে।
ডিভিনা মালোম আলো হয়ে উঠুক সহিংসতার শিকার শিশুদের কাছে।
নতুন নতুন গল্প,কবিতা,ছড়া,ফিচার সহ শিশু-কিশোরদের লেখা সৃৃজনশীল লেখাগুলোর আপডেট পেতে ক্লিক করুন]
শিশু সহিংসতা বন্ধে ডিভিনা মালোম ।
Reviewed by সম্পাদক
on
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯
Rating:
