-->

একজন রাক্ষসী জোয়ান অব আর্ক!

জেবা সামিহা তমা, (রংপুর):

আজকে তোমাদের একটা রাক্ষসীর গল্প শুনাবো, যেটা মোটেও রূপকথার গল্প নয়। মধ্যযুগে ঘটে যাওয়া সত্যিকারের গল্প।
ফ্রান্সে ছিলো এক রাক্ষসী। সেই রাক্ষসী বন্দি হবার পরে তার বিচার হয় এবং শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি হয় আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যু। শুধুমাত্র তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যে তাকে তিন বার আগুনে পোড়ানো হয়। 
কিন্তু ফ্রান্স তো মানুষের দেশ তাহলে সেখানে কিভাবে এই রাক্ষসীর আবির্ভাব হলো? কি কারণেই বা তাকে এমন ভয়ংকর সাজা পেতে হলো? তাহলে সম্পূর্ণ গল্পটা শোনা যাক —
ফ্রান্স ছিলো একটা সুখী দেশ। কিন্তু এই সুখী দেশের রাজা দশম লুই - এর কোনো পুত্র সন্তান জীবিত ছিলো না তাই এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে রাজা হলেন তার ভাই ফিলিপ। এরপর এই একই কারণে রাজা হলেন তার ছোটো ভাই চতুর্থ চার্লস। ঘটনাক্রমে এই রাজারও কোনো পুত্র সন্তান ছিলো না।
রাজা চতুর্থ চার্লসের মৃত্যুর পরে সিংহাসনে বসার দাবিদার হলেন এই তিন রাজার বোন ইসবেলার ছেলে তৃতীয় এডওয়ার্ড যে ছিলো ইংল্যান্ডের রাজা।
কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজা ফ্রান্স শাসন করবে এটা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ। তাই আরেক আত্মীয় ফিলিপকে রাজা বানানো হলো। যাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড এবং তাকে এই বিষয়ে আরও রাগিয়ে দিচ্ছিলো তারই উপদেষ্টা তৃতীয় রবার্ট। কিন্তু তৃতীয় রবার্ট এই কাজটা কেনো করছিলো জানো? কারণ সে ফ্রান্সের সভাসদ থেকে বিতারিত হয়েছিলো সেই রাগ আর ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে সে রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডকে কৌশলে যুদ্ধের জন্যে অনুপ্রাণিত করছিলো৷
তাই রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড জোর করে ফ্রান্সের সিংহাসন দখল করতে চান যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। তবে তার মৃত্যুর পর ইংরেজরা বেশ কয়েকবছর যুদ্ধে বিরতি দিয়েছিলো। কিন্তু পরে আবার আক্রমণ শুরু করে আর তাতেই দূর্বল হতে শুরু করে ফ্রান্স।
যুদ্ধের সেই দুর্দিনে লোকমুখে একটা কথা প্রচলিত ছিলো তা হলো ‘ফ্রান্সকে রক্ষা করতে পারে একজন কুমারী মেয়ে’। কাকতালীয়ভাবে কিংবা সেই দৈববাণীকে সত্যি করতেই ৪১২ সালের ৬ই জানুয়ারি ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে ডঁরেমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ‘জান্ দার্ক (Jeanne d' Arc)’
যিনি অক্ষরজ্ঞানহীন হওয়ায় নিজের নামের বানান ভুল লিখতো এবং ইংরেজদের অন্যরকম উচ্চারণের বদৌলতে বিশ্ব তাকে চিনে ‘জোয়ান অব আর্ক’ নামে।
পাঁচ ভাই-বোন আর বাবা জাক দার্ক ও মা ইসবেলাকে নিয়েই ছিলো জোয়ানের পরিবার। বাবা-মা দু'জনই ছিলেন ধার্মিক এবং সেই অনুশাসনেই থেকেই মায়ের কাছে নিজ ধর্মের ধর্মীয় নিয়মনীতি সব শিখে নিয়েছিলো জোয়ান।
জোয়ানের বাবা গ্রামের মাতবর ধরনের লোক হলেও পেশায় তিনি ছিলেন একজন গরীব চাষি। তাই জোয়ানদের থাকার ঘরটাও খুব একটা ভালো ছিলো না। জোয়ান কখনো পড়াশোনা করেননি সে তার পরিবারের সাথেই কৃষি জমিতে কাজ করতো, গোয়ালঘরের সব কাজ একাই সামলে নিতো তবে সুতো কাটা ও সেলাইয়ের কাজে জোয়ানের বিশেষ দক্ষতা ফুটে উঠতো।
জোয়ান ছিলো শান্ত, নম্র ও ভদ্র মেয়ে। সে খুব মন দিয়ে নিয়মিত প্রার্থনা করতো। তার বয়সী অন্যান্য শিশুরা যখন মাঠে খেলা করতো জোয়ান তখন ধর্মচর্চায় ব্যস্ত। অবশ্য এরজন্য তাকে অনেক উপহাসের সম্মুখীন ও হতে হয়েছে।
যাইহোক, একদিন দুপুরবেলা জোয়ান ক্ষেতে একাই কাজ করছিলো এমন সময় হঠাৎ করে গির্জার সব ঘন্টা একসাথে বাজতে শুরু করলো। জোয়ান চারপাশে তাকালো তারপর দেখতে পেলো আকাশ থেকে কিছু আলোকরশ্মি সোজা চাষের জমিতে পড়ছে। এরপর মানুষের কণ্ঠের মতো কণ্ঠে কিছু কথা শুনতে পেলো জোয়ান। আসলে সেগুলো ছিলো দৈব বাণী। বিস্ময়কর হলেও জোয়ান কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে কাউকে কিছু জানায়নি। এরপর এই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হতে থাকলো।
এরপর হঠাৎ একদিন সেই আলোকরশ্মিতে দেখতে পেলো দেবদূত সেন্ট মাইকেলকে তারপর একে একে দেখতে পেলো সাধ্বী ক্যাথরিন ও সাধ্বী মার্গারেটকে। নিশ্চয়ই কৌতূহল হচ্ছে সেই দেবদূত গণ জোয়ানকে কি বলতো? খুব বিশেষ কিছু না তারা সবসময় ভালো মেয়ে হওয়ার পরামর্শ দিতো, নিয়মিত গির্জায় যাওয়ার উপদেশ দিতো।
সময় গড়িয়ে যায়। ছোট্টো জোয়ান বড় হতে থাকে। একদিন দেবদূত তাকে ‘বলে ফ্রান্সের অনেক বড় বিপদ, ঈশ্বর তাকে দিয়েই ফ্রান্সের জন্যে লড়াই করাতে চান। এরজন্য আগে তাকে নিজ গ্রাম থেকে বেরিয়ে পাশের শত্রু রাজ্য পেরিয়ে চার্লসকে মুকুট পরিয়ে ফ্রান্সের সম্রাট বানাতে হবে।’
তখন জোয়ান দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায় সে তো লড়াই যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানে তাহলে কিভাবে কি করবে?
সেইসময় জোয়ান তার বাবা-মাকে জানায় যে সে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিতে চায় তখন তারা জোয়ানকে আটকানোর জন্যে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে। এই প্রথমবার জোয়ান প্রতিবাদ করে, সবাই বিস্ময়ের সাথে দেখতে পায় এক অন্যরকম শক্তিশালী জোয়ান অব আর্ক কে।
প্রশিক্ষণ ও সৈন্যদলের জন্যে জোয়ান বেড়িয়ে পরে ভোকুল শহরের উদ্দেশ্যে সেখানে রয়েছে রাজ্যের গভর্নর। ভোকুলে জোয়ান ভাগ্যক্রমে এক বোনের বাড়িতে আশ্রয় পায়। বোনের জামাই গভর্নর-এর সাথে জোয়ানের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেন কিন্তু তিনি এক কিশোরীর কথা মানতে নারাজ। জোয়ান হতাশা নিয়ে ফিরে এসে। তখন ডঁরেমিতে শত্রুদের অত্যাচার বেড়ে যায়। এদিকে ইংরেজরা ফ্রান্সের অরলেঁয় নগরী অবরোধ করে রাখে। জোয়ানকে দেবদূতগণ আবারও নির্দেশ দেন। জোয়ান আবার ছুটে যায় ভোকুল শহরে গর্ভনরের কাছে। এবার দুইজন সৈন্য জোয়ানের সমর্থনে কথা বলে। সৈন্যগণ উচ্চ বংশীয় হওয়ায় গর্ভনরের মত পাওয়া সোজা হয়।
ওহ, তোমাদের বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। জোয়ানের আরেকটা বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হলো সে ভবিষ্যৎবাণী করতে পারতো। জোয়ান সেসময় বলেছিলো অরলেঁয়-এর এই যুদ্ধে ফ্রান্স হেরে যাবে এবং তাই হয়েছিলো। ফ্রান্সের এমন শোচনীয় অবস্থায় এক প্রকার নিরুপায় হয়েই গর্ভনর রাজি হয় জোয়ানকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজের সৈন্যদল গঠনের অনুমতি দিতে।
শুরু হয় জোয়ানের মূল লড়াই। ভোকুলের জনগণ তাকে উপহার দেয় যুদ্ধের পোশাক ও ঘোড়া, গর্ভনর উপহার দেয় তরবারি, আর নিজের পিঠের উপর ছড়ানো চুল গুলো কাটার মাধ্যমে শেষ হয় যুদ্ধের সাজ।
এখানে বলে রাখি জোয়ানের সবচেয়ে প্রিয় তরবারি ছিলো ‘ফিয়ারবোর আজব তরবারি’ যেটা জোয়ানের বাণী অনুসারে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো সাধ্বী ক্যাথরিনের মন্দির মাটি খুঁড়ে পাওয়া। এটা সে সবসময় নিজের সাথে রাখতো এবং তার পছন্দের ফ্রান্সের প্রতীক সংবলিত পতাকা ও।
এরপর ছয়জন সিপাহী আর অগাধ ঝুঁকি নিয়ে কৌশলের মাধ্যমে বার্গেন্ডি গ্রাম পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যায় রাজা চার্লসের কাছে। দেবতাদের আদেশ, তাদের দেওয়া চিহ্ন ও তার লক্ষ্য সব কিছু বলে রাজাকে তারপরেও রাজা চার্লস জোয়ানের আরও অনেক পরীক্ষা নেয়। এরপর রাজা নিশ্চিত হয়ে জোয়ানের হাতে ফরাসি সৈন্যের দায়িত্ব তুলে দেন।
তবে জোয়ান কখনোই যুদ্ধ পছন্দ করতো না। কারণ যুদ্ধ মানে কারো না কারোর মৃত্যু। জোয়ান যত গুলো যুদ্ধে জিতে যেতো সেইসব শত্রুদের ক্ষমা করে দিতো। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, তাদের বন্দী করা এসবই কখনোই করতো না।
১৪২৮ সাল। জোয়ান ইংরেজদের চিঠির মাধ্যমে সাবধান করে দেয় কিন্তু তারা তা গ্রাহ্য করেনি। অরলেঁয় নগরী উদ্ধারের জন্যে জোয়ান বাধ্য হয়ে চার হাজার সৈন্য নিয়ে অরলেঁয়তে পৌছায়। অরলেঁয়-এর আকাশে বাতাসে তখন আনন্দ। সেখানকার বাসিন্দাদের জোয়ানকে একবার ছুঁতে চাওয়ার বাসনা ছিলো তীব্র। কারণ তাদের বিশ্বাস তাদের মুক্তির খোঁজ নিয়ে এসেছে জোয়ান অব আর্ক। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে জোয়ান যেমন সৈন্যদের মনোবল বাড়িয়েছে তেমনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধও করে জয়ী হয়েছে।
১৪২৯ সালের ৭ই মে। এবার যুদ্ধ শুরু হয় টুঁরেল শহর দখল করার জন্যে। জোয়ান ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলো কাঁধে আঘাত পেলেও সে বেঁচে যাবে এবং টুঁরেল শহর দখল করতে পারবে। হয়েছেও তাই। ইংরেজদের বৃষ্টির মতো করে ছোঁড়া তীরের মধ্য দিয়েই জোয়ান যুদ্ধের ময়দানে সবার আগেই এগিয়ে চলছিলো। জোয়ানের অপ্রত্যাশিত বিজয় এরপর সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হলেন চার্লস। ফ্রান্সে তখন খুশির বন্যা বইছে।
কিন্তু এই খুশি খুব বেশি সময় স্থায়ী হলো না এবং তার কারণ ছিলো সম্রাট চার্লসের কিছু অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।
এরপর ছিলো জোয়ানের লক্ষ্য ছিলো বার্গেন্ডি উদ্ধার করা। কিন্তু ততদিনে ইংরেজরা বেশ বুঝতে পেরেছিলো জোয়ানের সাথে তাদের যুদ্ধে জয়ী হওয়া অসম্ভব তাই তারা অন্য পথ অবলম্বন করলো। বার্গেন্ডির শাসকের উপর ইংরেজরা হুমকি দেয় ও চাপ প্রয়োগ করে ফলে তারা বাধ্য হয়ে জোয়ানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং দশ হাজার ফ্রাঙ্কের বিনিময়ে জোয়ানকে বন্দী করে ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়।
এবার রাজনৈতিক চক্রান্তের মুখোমুখি হলো জোয়ান। তার বিচার হয়েছিলো ইনকুইজেশনের মাধ্যমে। ক্যাথলিক ধর্ম মতের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কাজ করলে ধর্মযাজকগণ একত্র হয়ে যেভাবে বিচার কার্য সম্পাদন করেন সেটাই ইনকুইজেশন। জোয়ানের বিরুদ্ধে তাদের যেই অভিযোগ গুলো ছিলো তার মধ্যে দুইটি হলো মেয়ে হয়ে পুরুষের পোশাক পরিধান করা এবং দেবতাদের সরাসরি তাকে আদেশ দেওয়া(কারণ অভিযোগকারীদের মতে দেবতারা কি চান তা শুধু গির্জার যাজকগণের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ জানতে পারবে)
প্রায় এক বছর পর শুরু হয় জোয়ানের বিচার কার্য। ততদিন জোয়ান শেকল পরা অবস্থায় রুয়ঁ-এর  কারাগারে বন্দী ছিলো। নিয়ম অনুসারে যাজক অথবা যাজিকারা পাহারাদার হিসেবে থাকার কথা থাকলেও জোয়ানের কারাগারের কারাগারের পাহারাদার ছিলো ইংরেজ সৈন্যরা।
এরপর নিজের পক্ষে কোনো উকিল পায়নি জোয়ান অথচ তার বিপরীতে ছিলো অনেক বিজ্ঞ পন্ডিত গণ। তারা একের পর এক প্রশ্ন করে জোয়ানকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো। অর্থাৎ জোয়ান যদি একটা প্রশ্নেরও ভুল উত্তর দেয় তাহলে তাকে সহজেই রাক্ষসী প্রমাণ করা যাবে এবং তার সাথে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে ফ্রান্সের সম্রাট চার্লসকেও শাস্তি দেয়া যাবে।
কিন্তু জোয়ান পড়াশোনা না জানলেও সে ছিলো বিচক্ষণ মেয়ে। একটি প্রশ্ন একাধিকবার করা হলেও, এক প্রশ্নের মধ্যে অন্য আরেকটি প্রশ্ন করা হলেও সব প্রশ্নের উত্তর বুঝে শুনেই দিয়েছিলো জোয়ান। জোয়ানের উত্তরে ছিলো দৃঢ়তা, সত্যতা এমনকি কৌতুকের সুরেও জবাব দিয়েছিলো সেসব দেখে তো তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলো বিচারকেরা।
দুঃখের বিষয় সেসময় যারা জোয়ানকে সমর্থন করতো তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি আর প্রায় সকল প্রমাণ ছিলো মিথ্যে ও বানোয়াট।
শেষ পর্যন্ত বিচারক দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বললে জোয়ান তা করতে অস্বীকার জানায়। কারণ প্রকৃত যোদ্ধারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। তাই বিচারকার্য শেষ করে দেওয়া হয়। এরপর রায় - এ ঘোষণা দেওয়া হয় যে জোয়ান একজন বেহায়া ও ঘৃণ্য নারী।
জোয়ান যখন দেখলো তাকে বাঁচাতে সম্রাট চার্লস কিংবা কোনো দেবতা আসলো না তখন সে নিশ্চিত হলো এবার তার মৃত্যু অনিবার্য। জোয়ান কথা দিলো এখন থেকে সে মেয়েদের পোশাক পরিধান করবে এবং গির্জার সকল নিয়ম মেনে চলবে।
কিন্তু এই নতি স্বীকার করেও মুক্তি পায়নি জোয়ান। তার অনেক অনুরোধেও তাকেও গির্জার কারাগারে না রেখে তাকে অপরাধীর মতো মাথার সব চুল ফেলে দিয়ে হাত পায়ে শিকল পরিয়ে ইংরেজদের কারাগারে রাখা হয়। চারদিন পরে জোয়ান জানায় এভাবে থাকার চেয়ে মৃত্যু বরণ করে নেয়াই শ্রেয়।
১৪৩১ সালের ৩০ই মে। দুইজন যাজক তাকে কারাগারে গিয়ে বলে এক ঘন্টার মধ্যে তাকে পুড়িয়ে মারা হবে সে চাইলে এখনো তার অপরাধ স্বীকার করে নিতে পারে। তার বিপরীতে জোয়ান শুধু দুই চোখ থেকে নোনাজল উত্তর দিয়েছিলো। হায়! মাতৃভূমির জন্যে যুদ্ধ করা কিশোরীর কি এমন অপমানের মৃত্যু ভাগ্যে ছিলো!
বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হলো জোয়ানকে। জোয়ান স্পষ্ট শব্দে প্রার্থনা করলো, তার শত্রুদের ক্ষমা করে দিলো, জোয়ানের কান্নায় তখন চারিদিকে শোক নেমে এসেছিলো এবং আরও অনেকের চোখেও ছিলো পানি। এরপর প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়াই তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় এবং সেই ছাই ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। তাকে পুড়িয়ে মারার পর জল্লাদ ও ভয় পেয়ে যায় যে এমন অপমৃত্যুতে জোয়ানের আত্মা কি মুক্তি পাবে?
এরপর অবশ্য আরও ১৮ বছর যুদ্ধ চলেছিলো। জোয়ানের একমাত্র ইচ্ছানুযায়ী সম্রাট চার্লস একজন ভালো ও বিচক্ষণ শাসক হওয়ার চেষ্টা করেন। ১৪৬৫ সালে রুয়ঁ যখন ফ্রান্সের অধীনে এলো তখন সম্রাট জোয়ানের বিচারকার্যের আবার তদন্ত শুরু করলেন। দেড়শো লোকের সাক্ষ্য, পুরনো নথিপত্র সব কিছু ছয় বছর ধরে তদন্ত করে জোয়ানের মৃত্যুর ২৫ বছর পর তাকে নির্দোষ বলে রায় দেওয়া হয় এবং যেখানে তাকে পুড়িয়ে মারা হয় সেখানে সম্রাট চার্লস একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করেন। যেসকল যায়গায় জোয়ানের আত্মার মুক্তি না পাওয়ার ভয়ে মানুষ যেতে পারতো না সেখানেও তার রায় পড়ে শোনানো হয়।

১৯২০ সালের ১৬ই মে মহামান্য পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট জোয়ান অব আর্ক - কে সাধ্বী হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ফ্রান্স পার্লামেন্ট ঘোষণা দেয় যে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পুরো ফ্রান্সে জোয়ানের নামে জাতীয় উৎসব পালন করা হবে।
তো, তোমাদের এখন কি মনে হয়? জোয়ান অব আর্ক সত্যিই রাক্ষসী ছিলো নাকি একজন মাতৃভূমির রক্ষক ছিলো?


একজন রাক্ষসী জোয়ান অব আর্ক! একজন রাক্ষসী জোয়ান অব আর্ক! Reviewed by সম্পাদক on মঙ্গলবার, আগস্ট ০৯, ২০২২ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.