কোন এক প্রাচীন সময়ের কথা।উল্টো দেশ নামে একটি দেশের প্রাদুর্ভাব ঘটে এই পৃথিবীতে।দেশটিতে উল্টো নিয়মেই সবকিছুর নিয়মকানুন।দেশটির কোনো এক প্রান্তরে অর্ণব বাস করে তার পরিবারের সাথে।অর্ণব সবে মাএ ক্লাস ফোর থেকে ক্লাস ফাইভ এ উঠেছে।পড়ালেখায় সে বরাবরের মতোই অনেক কাঁচা।কিন্তু সে এবারের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল বরাবরের মতোই সে এবার সেরা রেজাল্টটি করছে ।সে ক্লাস ফোর থেকে উল্টো দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফলাফল করে রোল এক হয়ে ক্লাস ফাইভ এ উর্ওীণ হয়।সকল বিষয়েই শূন্য নাম্বার পেয়েছে সে।কিন্তু উল্টো দেশের হিসেব অনুযায়ী এটিই সর্বোচ্চ ফলাফল।একটি বিষয়েও তার এক নাম্বার পাওয়ার কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি।চারিদিকে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।সকল জায়গায় এখন শুধু তার কৃতিত্বের জয়জয়কার।কিন্তু সব আনন্দের পরও অর্ণবের মনটা কিনতু একদম ভালো নেই।সে মনে করে,তাদের উল্টো দেশের এই আজগুবি উল্টো নিয়মটা পরিবর্তন করা উচিত।যাই হোক একথা এখন যদি সে সবার সামনে বলতে যাই,তাহলে হতো সবাই তাকে পাগল বলে সম্মোধন করবে।
কিন্তু,তাদের দেশের সাথে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার এক দিক দিয়ে মিল রয়েছে।তা হলো পঞ্চম শ্রেণিতে তাদেরও একটি বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।সে পরীক্ষায় পাশ করার নিয়ম সবারই জানা।তাদের দেশে পরীক্ষায় ফেল বলে কোনো শব্দ নেই।যে সর্বনিম্ন নাম্বার পাবে,তাদের মেডেল অফ দ্যা ইয়ার এ ভূষিত করা হয়।তাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মেধাবী মেডেল অফ দ্যা ইয়ার এর নাম্বার ছিল -১০।কুৎসিত হাতের লেখার জন্য তাকে নাকি আরও ১০নাম্বার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।যাই হোক,অর্ণব কিন্তু এগুলো একেবারেই পাওা দেয়না।
তার দেনধারণা এখন সম্পূর্ণ ভিন্নদিকে চলে গিয়েছে।তার মনে হঠাৎ করে একটি প্রশ্নের উদয় হলো,আচ্ছা আমি যদি এ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট তা করে বসি,তাহলে কেমনিই বা হবে আমার অবস্থা। কেমন করে মানুষজন এর অবিভ্যাক্তি হবে আমার প্রতি।যেই ভাবা সেই কাজ।পরীক্ষার আরও পাঁচটি মাস বাকি ছিলো।বিগত মাস গুলো বইয়ের সাথে সম্পর্ক না থাকলেও,এখন সে পড়াশোনা নিয়ে একদম কঠোরভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।যেন বইই তার এখন একমাএ সম্বল।সে আকাক্ষা পোষণ করে ইতিহাসটাকে পাল্টে দেওয়ার এবং তা করার জন্য সে উঠেপড়ে লাগে।দীর্ঘ পাঁচ মাস কঠোর পরিশ্রম করার পর অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছিল সে মনে মনে।কিন্তু,এই দীর্ঘ পথ যাএায় তার সঙ্গী হিসেবে কেউ ছিলনা।অতিরিক্ত পড়াশোনায় বুদ হয়ে থাকার কারণে কতই না ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়েছে তাকে নিয়ে। অবশষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অর্ণব তার কাক্ষিত পরীক্ষার প্রশ্নটি হাতে পেল।হাতে পেয়েই পুরো প্রশ্নে একবার চোখ বুলিয়ে নেই সে।সবগুলো প্রশ্নের উওর যেন তার চোখের সামনে টিভির মতো ভাসছে। তার খুশি এখন আর দেখে কে।খুব মনোযোগ সহকারে সঠিকভাবে সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উওর দিলো সে।এখন শুধু রেজাল্টের অপেক্ষায়। সে দিনটি আসতেও বেশি দেরি হলোনা।রেজাল্টের দিন সকলেই নিয়ম করে স্কুলে গেল একটি নির্দিষ্ট সময়ে।কিছুক্ষণ পরই স্যার আসলো তাদের রেজাল্টশীট নিয়ে।বরাবরের মতোই এবার ও সবার ধারণা অর্ণব ই সেরা রেজাল্ট তা করবে।কিন্তু,সবাইকে হতবাক করে দিয়ে অর্ণব পরীক্ষায় ফেল করে।তাও আবার যেন তেন ফেল নই।একেবারে ডাহা ফেল যাকে বলে আরকি।অর্ণব তাদের পুরো দেশের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খারাপ ফলাফল অর্জন করেছে।সকল বিষয়ে ১০০ টে ১০০ এবং সুন্দর হাতের লেখার জন্য অতিরিক্তআরও ১০ নাম্বার বাড়তি দেওয়া হয় তাকে।সবাই যেন এক নিমেষেই থ হয়ে গেল।অর্ণবের কিন্তু সে দিকে কোনো দৃষ্টি নেই।সে মনে মনে এখন মহা খুশি।কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিক এলো রিপোর্ট নিতে যে টানা চার বার মেডেল অফ দ্যা ইয়ার ভূষিত একজন ছাএের এত অধঃপতন কীভাবে হলো?তারা অর্ণবের কাছে আসে এবং কারণ কি তা জিজ্ঞাসা করে।অর্ণব চুপ করে থাকে।তার ঠোঁটের একপাশে ফুটে ওঠে মুচকি হাসির আভা।এ যেন এক রহস্যময় হাসি।
