ফাতেমা আক্তার মনিরা,(ঢাকা):
আমরাও টাকা গুনি,ওরাও টাকা গুনে!
পার্থক্য টা শুধু,
আমরা টাকা "উড়াই",ওরা টাকা "কামায়"!
সকাল ৭ টা থেকে রাত ৮ টা, কি ব্যস্ত জীবন, কি ব্যস্ত সময়! যে বয়সটা এখন দৌড়-ঝাপ করার বয়স,যেই সময়টা ক্রিকেট ময়দানে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে মায়ের নরম আচল এর অপেক্ষার সময়,সেই সময়ে, সেই বয়সে ছেলেটা বেরিয়েছে রোজকার করতে!
সময় তখন সন্ধ্যা ৭ টা,সারাদিনের কাজ শেষে মিরপুর ১৪ থেকে ট্যাম্পু তে উঠলাম, সারাদিনের ক্লান্তি, রাস্তার জ্যাম সব মিলিয়ে এক বিদঘুটে অবস্থা ছিলো আমার!
ঠিক এই মুহূর্তে ছেলেটা বেশ শক্ত গলায় প্যাসেঞ্জার ডাকছিলো,গলার জোর দেখে মনে হচ্ছিলো মাত্র বাসা থেকে পেট ভরে খাবার খেয়ে বেরিয়েছে।
ভাবলাম কিছু কথা বলা যাক তাহলে ছেলেটা সংগে।
জিগ্যেস করলাম,
" কখন বেরিয়েছো কাজে?"
"দুপুরে "
"কোথায় কোথায় যাও?"
"ইসিবি থেকে ১৪ নাম্বার"
" সারাদিন কি করো?" জিগ্যেস করায়, হেসে উত্তর দিলো,"আফু,কি করমু? কাম করি"
"পড়াশুনা করো?"
"হ্যাঁ করি,মাঝে মধ্যে যখন সুযোগ পাই"
"স্কুলে যাও কখন?"
"প্রতিদিন যাইতে পারি না আফু,মাঝে মাঝে কামের ফাকে যাই!"
"বাসায় কে কে থাকে?"
"আমি, আমার ছোড বইন,আমার মা"
"বাবা নাই?"
"আছে,কিছু করে না"
"প্রতিদিন কেমন কামাই করো?"
"কোনোদিন দুইশো, কোনোদিন পাঁচশো"
পাচঁশো বলার সময়, ছেলেটার চোখ গুলি জ্বলজ্বল করছিলো,ঠোঁটের কোণের এক অন্যরকম হাসি।
দেখেই মনে হচ্ছিলো, বেশি আয় করার দিন, এই ছোট্ট সোনামণির দিনটা কেমন যায়। কেমন আনন্দ লাগে!
আচ্ছা? টাকা তো আমরাও গুনি,টাকা ওরাও গুনে,
এই টাকা গুলো গুনার সময়, ওদের ও কি একবারের জন্যও মনে হয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়ার কথা?
কিংবা সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপে ঘামে পুরো শরীর ভিজে একাকার হওয়ার দিনে কি কখনো মনে হয় একটা আইসক্রিম কিনে খাই?
কে জানে!
হয়তো মনে হয়,এই "মনে হওয়া" কে, কিছু "মনে হয় না" তে বদলে ফেলে ওরা!
বুকের মধ্যে কোনো এক যায়গায় এই "মনে হওয়াকে" মাটি চাপা দিয়ে,দিব্যি হাসি মুখে ঘুরে বেড়ায় ওরা!
কোনোভাবেই একটা টাকাও নষ্ট করা যাবে না।
আমরাও টাকা গুনি,ওরাও টাকা গুনে!
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, মার্চ ১৩, ২০২০
Rating:
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, মার্চ ১৩, ২০২০
Rating:
