জেবা সামিহা,(রংপুর):
কলেজের ক্লাস পার্টিতে আমরা দেয়ালিকার ব্যবস্থা করেছিলাম। সেখানে ছাত্র ও শিক্ষকগণ তাদের মতামত লিখবে। এর দায়িত্বে ছিলাম আমি। দায়িত্বে সামান্য অবহেলার কারনে একটা মন্তব্য দেয়ালিকায় লাগানো হয়নি। পরে বাসায় এসে দেখলাম মন্তব্যটি ছিলো আমাদের সকলের প্রিয় মোমিনুল স্যারের। এবং মন্তব্য হিসেবে লেখা ছিলো "তোমরা স্বপ্ন দেখতে শিখো"। মন্তব্যটি পড়ে মুচকি হাসলাম আর ভাবতে লাগলাম প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় কিভাবে স্বপ্ন দেখবো? অসম্ভব ভালো লাগছিলো মন্তব্যটি পড়ে কারন আমাদের অভিভাবক পর্যায়ের কেউ এমন করে ভাবে এখনো।
সত্যি তো যেভাবে স্বপ্ন দেখা ভুলে নিশ্চিত এক ভবিষ্যৎের প্রতিযোগিতায় নেমেছি আমরা তাতে করে তো কেউ চাইবে আমরা আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। আমি ভেবেছিলাম প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় সবাই প্রতিযোগি কিন্তু না। এখনো স্বপ্ন দেখতে চাওয়ার বা দেখানোর মানুষ বিলীন হয়নি।
একাদশ - দ্বাদশ শ্রেনীর ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে স্বপ্নের এত সংজ্ঞা পড়ে মনে হলো স্বপ্ন অনেকভাবে অনেকধরনের হয়। হয়তো আমার ভাবনা ভুল ও হতে পারে। তবে স্বপ্ন যেমনি হোক না কেনো তা দেখার জন্যে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। ঘুমের মধ্যে যে স্বপ্নটা দেখি তার জন্যে কল্পনা লাগে। এখন যদি কারো ঘুমে দৈবভাবে কোনো স্বপ্ন আসে তা আলাদা বিষয়। আমি সেটা নিয়ে বলতে চাই না। আমি বলতে চাই সে স্বপ্নের কথা যা আমাদের বাস্তব প্রাণের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন দেখার জন্যে সুন্দর একটা মন চাই শুধু। আর কিছু লাগে না।
আজ যদি সুন্দর একটা বেঁচে থাকার স্বপ্ন না দেখেই বেঁচে থাকার দৌড় শুরু করে দেই তবে সে বেঁচে থাকার আনন্দ কোথায়? ছোট্ট ত এই জীবন টা। এই জীবন প্রাণ খুলে বাঁচতে না পারলে নিজের জন্যে কি করলাম? আচ্ছা, আমাদের শিশুদের বর্ণমালা শিখানোর সাথে স্বপ্ন দেখানো শিখানো হয় না কেনো? কেনো তখনি তাকে একটা লক্ষ্যে বেধে দেয়া হয় কেনো? কেনো শিশুদের শিখানো হয় না স্বপ্ন দেখার মধ্যে রয়েছে অনাবিল প্রশান্তি, বেঁচে থাকার এক কারন, আর রয়েছে এক চিলতে হাসি ফোটানোর সূত্র? কেনো শিশুদের এটা বলে বড় করা হয় না যে স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরির সূচনা হয়?
শিশুদের স্বপ্ন দেখতে শেখান। আর লক্ষ্য? সে তো বড় হয়ে যোগ্যতা ও পছন্দমত ঠিক করা যেতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য ঠিক করার আগে স্বপ্ন দেখাটাও প্রয়োজন নাহলে লক্ষ্যটাও স্থির হবে না।
স্বপ্নের কোন প্রকার হয় না,
স্বপ্নের কোনো রঙ বা বর্ণ হয় না।
স্বপ্নের শুধু ঠিকানা হয়,
স্বপ্নে শুধু ভালো থাকার মানে হয়।
স্বপ্ন দেখতে মানা নেই,
স্বপ্ন দেখতে পাপ নেই।
তবে হ্যাঁ স্বপ্ন পূরণ করা প্রচেষ্টা চালাতে হয়। জিততে পারলে তুমি তোমার মনের বাদশা। আর যদি না জিতো তবে হেরে যাবে না। কারন তখন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পাওয়া যায়। স্বপ্ন যেমনি হোক না কেনো বড় বা ছোট, স্বপ্ন ত স্বপ্নই। স্বপ্ন ছুঁতে পারলে ত আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়।
আচ্ছা মোমিনুল স্যার এমন মন্তব্য কেনো লিখেছিলেন? আমরা স্বপ্নকে ছুড়ে ফেলে যান্ত্রিকতার দুনিয়ায় প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছি তাই লিখেছেন? আচ্ছা তবে কি তিনি আংশকা করছেন স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাবো আমরা? যন্ত্রের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও স্বপ্নহীন যন্ত্র হয়ে যাবো?
চলার পথে যদি থমকে যাও বা ভেঙ্গে পড়ো তাহলে সেখান থেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করো। তাহলে আবার উঠে দাড়ানোর শক্তি নতুন করে খুজে পাবে।
একটু ভাবলে বোঝা যায় যারা সফল হয়েছে তাদের পিছনের গল্পে পরিশ্রম ছাড়াও আরও রয়েছে স্বপ্ন। তারা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে অতঃপর তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এরপরেই তো তারা সফল হয়েছে। যদি একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি মনের মতো করে একটা সুন্দর ক্যারিয়ার বা ভবিষ্যৎ আমরা পেয়ে থাকি তাহলে অযথা কেনো স্বপ্নহীন ভাবে যন্ত্রের দুনিয়ায় প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি?
অনেকে বলবে স্বপ্ন! সে তো অবাস্তব। বেকার স্বপ্নের মধ্যে বাঁচার কি দরকার? আমি তাদের বলবো হ্যাঁ, স্বপ্ন অবাস্তব হয়। আর অবাস্তব হয় বলে আমরা বাস্তবায়ন করার জন্যে ছুটি। আর এতে করে আমাদের এক প্রকার লড়াই করা হয়। স্বপ্নের মধ্যে বাঁচি বলেই তো লড়াই করার শক্তি পাই। আর লড়াই তো আমাদের বেঁচে থাকার একটা অপরিহার্য উপাদান। তাই না?
তাহলে এবার লড়াই করার জন্যে হলেও আমরা আমাদের শিশুদের স্বপ্ন দেখানো শুরু করতে পারি? অবশ্যই এমন স্বপ্ন দেখাবো যে স্বপ্নে থাকবে সুন্দর এক বেঁচে থাকা। যা হবে একান্ত নিজের মতো।
ফিচার: স্বপ্ন দেখতে শেখো।
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, জানুয়ারী ০৬, ২০১৯
Rating:
