জেবা সামিহা,(রংপুর):
অবাক হওয়া ছাড়া আর উপায় ছিলো না! একি শুনলাম। সম্পর্ক! তাও প্রেমের! ভাবছেন এতে অবাক হওয়ার কি আছে? অবাক হবো না ৮ বা ৯ বছর বয়সী কেউ বিপরীত লিঙ্গের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে অবাক হবো না? আপনি অবাক হচ্ছেন না? হয়তো কেউ কথাটা শুনে অবাক হচ্ছেন। হয়তো কেউ হচ্ছেন না। সচারাচর এটা দেখাই যায় তা বলতে একটু ভাবতে হচ্ছে।
৮-৯ বছরের বালক বালিকারা তাদের সমবয়সী কারোর সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে। ৮-৯ বছরের বাচ্চারা এমনভাবে প্রেম নিয়ে বক্তৃতা দেয় আমি পর্যন্ত থমকে যাই। কেউ কেউ এটা হেসে উড়িয়ে দেবে। কেউ আমার ত অবাক হবে। আবার কেউ কেউ সব জেনে চুপ থাকবে। কেউ কিছুটা গুরুত্ব দিলেও কেউ আবার দিবে না। কেউ আবার ব্যাপারগুলোকে মজা হিসেবে নিবে।
কিন্তু আমরা কাছে মনে হয় এটা অসুস্থ সমাজের ফলাফল। আজকে এই শিশুরা তাদের উপযুক্ত নয় এমন সিনেমা আর গান শুনছে। যার ফলে ৮-৯ বছরের বাচ্চার মস্তিষ্কে অনুপযুক্ত প্রেম ভালোবাসা গেঁথে যাচ্ছে। তাদের বলে দেওয়া হচ্ছে না কোনটা তাদের উপযুক্ত আর কোনটা নয়। ২-৩ বছরের একটা শিশুকে খাওয়াতে যখন আমরা তাকে রোমান্টিক গান শুনাই তখন ৮-৯ বছরের বাচ্চার থেকে প্রেমের কথা শুনাটা স্বাভাবিক। আর তাছাড়াও কিছু যুবক যুবতি র অসচেতন কাজ ও এর জন্যে দায়ী। বাচ্চারা এই বয়সটাতে দেখে শিখে, তাই স্বাভাবিক সে সামনে যা দেখবে তাই শিখবে। তাহলে দোষটা কার?
এইধরনের কথা শুনে অনেকের কাছে মজা লাগতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এটা মজার কিছু নয়। এটার চিন্তার বিষয়। এখন সময় এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার। কারন আমাদের কোমলমতি শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে না। একটা ৮-৯ বছরের বাচ্চা যখন বিপরীত লিঙ্গের জন্যে প্রেমের কথা বলে তখন এটা তার অসুস্থ ও অস্বাভাবিক বিকাশের পরিচয়।
এখন আপনারা বলবেন এটা কম্পিউটার যুগ। এ যুগের বাচ্চারা একটু বেশি হালনাগাদ ( update) হবে। তাহলে এটা কি ধরণের হালনাগাদ? আপনার ১২ অথবা ১৩ বছরের ছেলে অথবা মেয়ে এসে যখন আপনাকে বলবে "I am in love. I wanna marry my lover." তখন ও কি এটা আপনার কাছে হালনাগাদ মনে হবে? তখন হয়তো বাচ্চাকে খুব খুব কড়া শাসন করবেন এরপর হিতের বিপরীত হবে। শাসনের সময়টা দেরি হলো না?
যদি এ যুগের বাচ্চারা হালনাগাদ হয় তাহলে তারা তাহলে কম্পিউটার মাস্টার বা বিদ্যুৎের বাতি ছাড়া কিভাবে অন্য উপায়ে আলো আনা যায় তাই ভাববে। এযুগের বাচ্চারা নতুন করে দেখবে এই অবাক বিশ্বকে। মানুষকে দিবে এক অনন্য জগৎ। জি, এটাই স্বাভাবিক হালনাগাদ। ছেলে মেয়ের ভালোবাসা একটা বাচ্চার হালনাগাদ নয়।
এখন বলবেন বাচ্চারা কি ভালোবাসা শিখবে না? শিখবে তবে তা দেশকে, দেশের মানুষকে, নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে শিখবে। যা তার বিকাশের জন্যে উপযুক্ত। দেশের প্রতি ভালোবাসা না জাগালে প্রতিক্ষিত বাংলাদেশ কিভাবে হবে?
পুরাতন ধ্যানধারণা মনে করলেও ঠাকুমার ঝুলি, মীনা কার্টুন সবচেয়ে ভালো হবে শিশুদের জন্যে। আর যদি খুব আধুনিক হন তাহলে বলবো আজকাল কার্টুনের অভাব নেই। তবে শিশুদের আমাদের সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দেওয়াটাও আমাদেরই দায়িত্ব। দাদু নানুর কাছে গল্প শোনাটা অনেকটা মনে হয় হারিয়ে গেছেই। নাহলে এমনদিন কেনো দেখি? খারাপ লাগলেও সত্যি মায়েরা আজ প্রযুক্তিতে ব্যস্ত। চাঁদ মামাকে দেখিয়ে কত মা আর খাওয়ায়? আচ্ছা ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসিরা আজও আসে খোকা-খুকি কে ঘুম পাড়াতে? গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর দিনগুলি ছিলো সোনালি দিন নাহলে কি সেই দিনগুলি থেকে আমরা সোনার সন্তান পাই?
একটা শিশুর সুস্থ, স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় বিকাশই পারে আমাদের স্বপ্নের দেশ গড়তে। কারন এই শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ।
শিশুর সুস্থ বিকাশই গড়ে তুলবে সুন্দর বাংলাদেশ ।
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
Rating:
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
Rating:
