নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ বাংলা সাহিত্যের দুই কালজয়ী সাহিত্যিক এর জন্মদিন। আসুন জেনে নেয়া যাক তাদের সম্পর্কে।
হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ – ১৯ জুলাই, ২০১২):তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচিত্রনির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখকদের অন্যতম গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপকহিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন।পরবর্তীতে লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। সত্তর দশকের এই সময় থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তাঁর সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীও তাঁর সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত। ধরা হয় বাংলাদেশের প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তিনিই লিখেছেন, এবং এর জনপ্রিয়তাও তার হাত দিয়ে শুরু হয়। তাঁর রচিত প্রথম সায়েন্স ফিকশন তোমাদের জন্য ভালোবাসা। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশি না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্ব সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪-এ তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণিমুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তাঁর নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), শ্যামল ছায়া (২০০৪), ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। শ্যামল ছায়া ও ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
জীবনী
প্রারম্ভিক জীবন
জন্ম ও শৈশব
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বরতৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার মোহনগঞ্জে তাঁর মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন।তাঁর বাবা সাহিত্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। বগুড়া থাকার সময় তিনি একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন। গ্রন্থের নাম দ্বীপ নেভা যার ঘরে। তাঁর মা'র লেখালেখির অভ্যাস না থাকলেও শেষ জীবনে একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম জীবন যে রকম।পরিবারে সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়া ছিল। তাঁর অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন শিক্ষাবিদ এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট।তাঁর তিন বোন হলেন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহিদ, ও রোকসানা আহমেদ।
তাঁর রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় যে ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তাঁর পিতা (ফয়জুর রহমান) নিজের নামের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে আবার তিনি নিজেই ছেলের নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদরাখেন। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, তাঁর পিতা ছেলে-মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। তাঁর ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং ছোটবোন সুফিয়ার নাম ছিল শেফালি। ১৯৬২-৬৪ সালে চট্টগ্রামে থাকাকালে হুমায়ুন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু।
শিক্ষাজীবন
তাঁর বাবা চাকুরী সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন বিধায় হুমায়ূন আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলেরআবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন (নন্দিত নরকেউপন্যাসটি মুহসীন হলেই লেখা)।
বিবাহ
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৬ সালে গুলতেকিন খানকেবিয়ে করেন। গুলতেকিন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁরনাতনী। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে নোভা আহমেদ, মেজো মেয়ে শীলা আহমেদএবং ছোট মেয়ে বিপাশা আহমেদ। তাঁর বড় ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে সন্তান অকালে মারা যায়। তিনি তার নাম রেখেছিলেন রাশেদ হুমায়ূন।
মিসির আলি চরিত্র নিয়ে লেখা-
মিসির আলি চরিত্রটি আহমেদের মাথায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে গাড়িতে ভ্রমণকালে। এই ঘটনার অনেকদিন পর তিনি মিসির আলি বিষয়ক প্রথম উপন্যাস দেবী লিখেন।১৯৮৫ সালে উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচনা করেন নিশীথিনী (১৯৮৭), নিষাদ(১৯৮৮), অন্য ভুবন (১৯৮৯) ও বৃহন্নলা (১৯৮৯)।[২৭]
হিমু ও শুভ্র চরিত্র নিয়ে লেখা-
হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট হিমু চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে ময়ূরাক্ষী উপন্যাস দিয়ে। ১৯৯০ সালে মে মাসে অনন্যা প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে চরিত্রটি পাঠকদের, বিশেষ করে তরুণ সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে দরজার ওপাশে (১৯৯২), হিমু (১৯৯৩), পারপার(১৯৯৪), এবং হিমু (১৯৯৫), হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম (১৯৯৬), হিমুর দ্বিতীয় প্রহর (১৯৯৭), হিমুর রূপালী রাত্রি (১৯৯৮), এবং একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁঝিঁপোকা (১৯৯৯) ইত্যাদি। এছাড়া এই উপন্যাসগুলো নিয়ে হিমু সমগ্র (১৯৯৪), হিমু সমগ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৯৮), এবং হিমু অমনিবাস (২০০০) প্রকাশিত হয়। হুমায়ূন আহমেদ এর লেখায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত- এরকম একটি কথা বলাও হলেও হিমুর লেখাগুলোর ক্ষেত্রে তা সত্যি নয়।
শুভ্র চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস দিয়ে। যদিও শুভ্র চরিত্রটি প্রথম আসে তার লেখা একটি ছোটগল্পে, যার নাম 'শাদা গাড়ি।' দারুচিনি দ্বীপ বইটি অনুপম প্রকাশনী থেকে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়। শুভ্রকে নিয়ে রচিত তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস হল মেঘের ছায়া। এটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাসের গল্পের শেষ থেকে শুরু হয় পরবর্তী উপন্যাস রূপালী দ্বীপ (১৯৯৪)।
বিবাহবিচ্ছেদ ও দ্বিতীয় বিবাহ
১৯৯০ সালের মধ্যভাগ থেকে তার কন্যা শীলার সমবয়সী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৩ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। এ কন্যার নাম তিনি রাখতে চেয়েছিলেন লীলাবতী। ছেলেদের নাম নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।
ক্যান্সার ও মৃত্যু
জীবনের শেষভাগে ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডির ৩/এ রোডে নির্মিত দখিন হাওয়াভবনের একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করতেন। খুব ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস ছিল তাঁর, ভোর থেকে সকাল ১০-১১ অবধি লিখতেন তিনি। মাটিতে বসে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কখনো অবসর পেলে ছবি আঁকতেন।
২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তাঁর দেহে মলাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে টিউমার বাইরে ছড়িয়ে না-পড়ায় সহজে তাঁর চিকিৎসা প্রাথমিকভাবে সম্ভব হলেও অল্প সময়ের মাঝেই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১২ দফায় তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তাঁর অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯শে জুলাই ২০১২ তারিখে তিনি নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।তাঁকে নুহাশ পল্লীতেদাফন করা হয়।
রচনাশৈলী
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তাঁর রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো 'গল্প-সমৃদ্ধি'। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়।[১০] তাঁর গল্প ও উপন্যাস সংলাপপ্রধান। তাঁর বর্ণনা পরিমিত এবং সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা তাঁর রয়েছে। যদিও সমাজসচেতনতার অভাব নেই তবু লক্ষ্যণীয় যে তাঁর রচনায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে; ফলে 'নেতিবাচক' চরিত্রও তাঁর লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। এ বিষয়ে তিনি মার্কিন লেখক স্টেইনবেক দ্বারা প্রভাবিত। অনেক রচনার মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত। এছাড়া জোছনা ও জননীর গল্প আরেকটি বড় মাপের রচনা, যা কি-না ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধঅবলম্বন করে রচিত। তবে সাধারণত তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে লিখতেন।
মীর মশাররফ হোসেন (নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ডিসেম্বর ১৯, ১৯১১) : তিনি ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ।কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।
তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন।
মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন।
প্রাথমিক জীবন
মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়।কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন।তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন
মীর মশাররফ হোসেনের স্কুল জীবন কেটেছে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে পদমদী এবং শেষে কৃষ্ণনগর শহরে। জগমোহন নন্দীর পাঠশালা, কুমারখালির ইংলিশ স্কুল, পদমদী নবাব স্কুল, কৃষ্ণনগর কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল এ পড়ার কথা লেখকের আত্নজীবনীতে লেখা আছে।
রচনাবলি
এখন পর্যন্ত মশাররফ হোসেনের মোট ৩৬ টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রকাশের তারিখ অনুসারে সেগুলো হল :
বিবাহ ও মৃত্যু
মাত্র আঠার বছরে বয়সে তাঁর পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
আজ বাংলা সাহিত্যের দুই কালজয়ী লেখকের জন্মদিন। চলুন জেনে নেই তাদের সম্পর্কে -
Reviewed by Md. Ahosan Habib Maruf
on
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
Rating:
