শারমিন মেধা,(গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,বেরোবি):
অটিস্টিক বা স্পেশাল চাইল্ড শব্দগুলো এখন খুব বেশি অপরিচিত নয় আমাদের কাছে।
অটিজম শিশুর মানসিক সমস্যাকে বোঝানো হয়। অটিজম কোনো রোগ নয়।
এটি স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যার একটি বিস্তৃত রূপ বা অটিজ স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত।
একে বলা হয় ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার।
১৯৪৩ সালে সর্বপ্রথম অটিজম সম্পর্কে জনসম্মুখে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়। প্রায় একই সময়ে জন হপকিনস হাসপাতালের ডা: লিও কান্নের এবং জার্মান বিজ্ঞানী ডা: হ্যান্স এসপারজার এ রোগ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
প্রাক শৈশবকাল থেকে এই সমস্যাটি শুরু হয়, যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান বিষয়। এর ফলে শিশুটির পক্ষে নিজেকে একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে বড় হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে,সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।এটা মনে রাখা জরুরি যে, সব অটিস্টিক শিশুই এক রকম নয়।
যদিও দেখা গেছে যে অটিজমে ছেলেরাই বেশী আক্রান্ত হয়, কিন্তু এই রোগ ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই হতে পারে।
বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং আচরণগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুই স্বাভাবিক ভাবে বড় হয়ে ওঠে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। অটিজম রোগীরা সাধারণত অত্যন্ত বুদ্ধিমান হবার ফলে তাঁদের পছন্দের বিষয়ে সেরা হয়ে উঠতে পারে।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের লক্ষণসমূহ –
মূল লক্ষণ হল- সামাজিক বা পারিবারিক যোগাযোগের অসঙ্গতি
এছাড়াও
আচরনে অস্বাভাবিকতা-
একই আচরণ বারবার করতে থাকে।
আওয়াজ পছন্দ করে না।
তারা রুটিন মেনে চলতে ভালোবাসে। দৈনন্দিন কোনো রুটিনের হেরফের হলে তারা মন খারাপ করে।
কোনো কারণ ছাড়াই দেখা যায় তারা হঠাৎ রেগে ওঠে বা ভয়ার্ত হয়ে যায়।
প্রতিক্রিয়া প্রকাশ-
নিজের নাম শুনলে সেভাবে প্রতিক্রিয়া না করা।
পরিবারের কেও আদর করলে সেক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
কোন কিছু করতে বলা হলে সেক্ষেত্রে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখানো।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে-
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আপন ভুবনে থাকা বা অন্যের উপস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা।
নিজ বয়সীদের সাথে বা বাচ্চাদের সাথে অল্প সময় কাটানো।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা আগ্রহ না দেখানো।
একা একা বেশিরভাগ সময় কাটানো বা অন্যের সংসর্গ পছন্দ না করা।
বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশ করা।
সরাসরি তাকানো থেকে বিরত থাকা।
পিতা-মাতার ভূমিকা
.অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকদের অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে।
. তাদের প্রতি সর্বদা হাসি, খুশি এবং চলাফেরা খেলাধুলার যেন বিঘ্ন না ঘটে তা সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে।
. তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
. এদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা আছে সেই প্রতিভা খুঁজে বের করে বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য বাবা, মা, অভিভাবককে অধিক যত্নশীল হতে হবে। স্কুলের শিক্ষকগণকেও একই পদ্ধতি অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে হবে।
অটিজম সম্পর্কে যত বেশী করে সম্ভব জানার চেষ্টা করতে হবে।
একটা রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করুন।
.অন্যান্য অটিজম রোগীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
.বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
.নিজের শরীর এবং স্বাস্থ্যেরও যত্ন নিন।
.বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত বুঝতে পারলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ অটিজম স্কুলে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এ বিষয়ে অনেক কাজ হচ্ছে, মানুষও সচেতন হচ্ছে কিন্তু মন্থর ভাবে।
সামাজিক ও পারিবারিক সমর্থন এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবার থেকেই এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ও সমর্থন কাম্য।
পর্যাপ্ত সচেতনতা আর সংবেদনশীল আচরণই পারে একজন অটিস্টিকের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে।
তথ্য: সংগৃহীত
ফিচার: অটিজমে চাই সচেতনতা। - লক্ষণ ও করণীয়।
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
Rating:
