আরাবি মিসবাহ,(সিলেট):
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। ‘মরা’ কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্ন। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দু’অংশের অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’। সম্রাট আকবর
অগ্রায়হন মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন।হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। নবান্ন (অর্থঃ নতুন অন্ন) পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব, যা সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়।
নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী,হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল।
হেমন্ত মানেই বাংলার চিরায়িত রূপে ফিরে যাওয়া, সকালে শিশির ভেজা মেঠো পথে খালি পায়ে হাটতে হাটতে কোন এক স্বপ্নের জগতে চলে যাওয়া।স্বদেশের প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা ।
হেমন্ত যেনো তার রাজকীয় রূপ ধারণ করে আসে।বাংলায় হেমন্ত আসুক বারবার তার রাজকীয় রূপ নিয়ে, দান করুক অবিরত তার রাজকীয় ভান্ডার থেকে।হাসি ফোটুক কৃষকদের মুখে,কবিরা লিখুক কবিতা হেমন্তের চিত্ররূপময়তা নিয়ে, নবান্ন উৎসবে মেতে উঠুক প্রিয় বাংলা, সমৃদ্ধ হোক প্রিয় জন্মভূমি।
ছবিসূত্র: গুগল
ফিচার: হেমন্তে বাংলার প্রকৃতির রাজকীয় রূপ।
Reviewed by Md. Ahosan Habib Maruf
on
বুধবার, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
Rating:
