জেবা সামিহা তমা,(রংপুর):
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা স্লোগান সরূপে বলি - একুশ আমার চেতনা, একুশ আমার অহংকার। কিন্তু দুঃখজনক এই কথাগুলো প্রায় সবাই বলে। এখন প্রশ্ন করবেন সবাই বললে সমস্যা কি? আমি উত্তরে প্রশ্ন করছি সত্যিই কি অমর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকলের চেতনার কারণ হয়? সকলের কি অহংকার হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে? আমার মনে হয় না।
চেতনা হলো চিন্তা ভাবনার আলেখ্য। অথবা বলতে পারেন বিবেকের দরজা উন্মুক্ত করা। ১৯৫২ সালে শুধুমাত্র নিজেদের মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্যে, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে কয়েকজন প্রাণ দিয়েছে। বিশ্ববিরল এ ঘটনা অবশ্যই চেতনাকে নাড়া দিবে। আর যদি না দেয় তাহলে মানুষের বৈশিষ্ট্য সব আপনার মধ্যে আছে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ রইলো।
মাতৃভাষার জন্যে আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রাণ দিয়েছিলো অথচ এই আমরাই নিজেদের মাতৃভাষাকে বিকৃত করছি প্রতিনিয়ত। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছুরই হালনাগাদ করতে হয় তাই নিজের মায়ের শেখানো বুলিও আজ বিকৃত করছি আমরা। তবে আমাদের চেতনা জাগে কিন্তু তা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক বিপণনকারী ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষে চেতনাকে জাগানোর মতো বা চেতনাকে জাগিয়ে তোলার জন্যে কিছু ভিডিও তৈরি করছেন। এর মধ্যেও তাদের স্বার্থ রয়েছে। অন্যান্য ১১ মাসে আমাদের বিবেক অবশ্য ঘুমিয়ে থাকে। সারা বছর পরিক্ষার হলে বা কর্মক্ষেত্রে এখন আপনারা আমাকেও বলতে পারেন উপর্যুক্ত কথাগুলো বলার অধিকার আমারও নেই। আচ্ছা মেনে নিলাম।
চিত্তরঞ্জন সাহা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে ১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বইমেলা শুরু করেন। কিন্তু তিনি যদি ঘুণাক্ষরেও জানতেন তার শুরু করা বই মেলায় বাংলা ভাষাকে ঘটা করে উপহাস করা হবে তাহলে তিনি এ উদ্যোগ কখনওই নিতেন না। যে বইমেলা আজ বাঙ্গালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য চর্চার স্থান হবার কথা ছিলো সেখানে আজকে বই এর নামে নিঁচু ব্যবসায় হচ্ছে। বইয়ের লেখায় অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা। ভাগ্যিস চিত্তরঞ্জন সাহা ২০০৭ সালে মহাযাত্রা করেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতেন। তবে চিত্তরঞ্জন সাহার আত্মার জন্যে আমার খুব খারাপ লাগছে। কারণ আমি বিশ্বাস করি আত্মারা দুনিয়াতে আসেন। চিত্তরঞ্জন সাহার আত্মা এসব দেখে ৫২ এর সন্তানদের আত্মার কাছে ক্ষমা চাইছে। আমি নিশ্চিত ৫২ এর সন্তানেরা আমাদের ক্ষমা করতে পারবেন না। কারণ আমাদের চেতনারা আজ মৃত।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেখানে ভাষার জন্যে রক্ত ঝরাতে দ্বিধাবোধ করেননি সেখানে আমাদের শুদ্ধ ভাষায় কথা সমস্যা কেনো হয়? যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে অত্যাধুনিক পরিপাটি উপস্থাপন করতে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে শহীদদের লড়াইয়ের বলিদান নাই বা করলাম। একদিনের না এক মাসের কয়েকদিনের দেখানো শ্রদ্ধাবোধ যেনো মেকি না হয় সে খেয়াল কিন্তু আমাদেরই রাখতে হবে। নাহলে অদূর ভবিষ্যৎে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে বৃথা বলতে বাধ্য হবেন কিছু বিবেকবান মানুষ। যা কোনোভাবেই আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
আজ নিজেদের ভাষায় কথা বলতে পারছি, অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি কোনোরূপ বাঁধা ছাড়াই। কমপক্ষে নিজেদের প্রাপ্ত এই স্বস্তি এবং শান্তিটুকুর জন্যে হলেও ভাষা শহীদ এবং তাদের ত্যাগকে সম্মান করুন।
আমি এই প্রাপ্তির মূল্য কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। কারণ আমি বিহারী অর্থাৎ বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের জীবনযাপন খুব কাছ থেকে দেখেছি। অন্য একটা ভাষা শেখা, সেটার উপর দক্ষতা অর্জন করে জীবন চালানো অনেক কষ্টের। মনে হয় বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে দম বন্ধ করে মেরে ফেলা হচ্ছে।
নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক ও শুদ্ধ ভাষা শেখান। তাদেরকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করুন যেনো এটা তাদেরও অহংকার হয়।
২১ যেনো সত্যিই প্রতিটা বাঙ্গালির চেতনার এবং অহংকারের কারণ হয়।
২১ কতটা চেতনার?
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২০
Rating:
