-->

বাংলাদেশের জন্য হতাশার ২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ

 

-নামিসা তাবাসসুম, (স্পোর্টস ডেস্ক):

০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম কোনো বৈশ্বিক শিরোপা ঘরে তুলেছিল। আকবর-শামিম-শরিফুলদের অনবদ্য সেই দলটা প্রোটিয়া-রাজ্যে লাল-সবুজের কেতন উড়িয়ে বাংলাকে করেছিলো ইতিহাসের সাক্ষী। পচেফস্ট্রুমে  ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে অর্থভ আনকোলেকারের বলটাকে মিড উইকেটে পাঠিয়ে একটি  সিঙ্গেল নিয়ে দলকে জয়ের-বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার কারিগর ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান।এবারে সেই রকিবুলকে অধিনায়ক করেই শিরোপা বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছিলো টাইগার-যুবারা।তবে বছর দুই ঘুরতে না ঘুরতেই পাল্টে গেছে সম্পূর্ণ চিত্রপট, এবার যে,সেই দলগত পারফরমেন্সের দাপট আর সাজানো-গোছানো ক্রিকেট-নৈপুণ্য দেখার স্বপ্নটাই অধরা রয়ে গেছে।কাজে লাগেনি তানজিম সাকিব-রকিবুলদের বিশ্বজয়ের অভিজ্ঞতা। তাইতো গত আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ঘরে ফিরেছেন ৮ম অবস্থান নিয়ে।


আকবর-শরিফুলরা যেখানে টানা দুবছর কঠোর অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে গয়েছিলেন, একসাথে খেলেছিলেন প্রায় ৩০টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ,সেখানে আইচ-অহিনরা খেলেছেন মাত্র ১২টি।মেনে নিতেই হবে,করোনার কারণে প্রস্তুুতির ঘাটতি ছিলো অনেকখানিই, তবে তা তো টুর্নামেন্টের বাকি সব দলগুলোরই ছিলো।
সেপ্টেম্বরে ঘরের মাটিতে আফগানিস্তান ও অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা সফর শেষে দেশে ফিরে খুলনায় একটি অনুশীলন ক্যাম্প শেষে, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ দল ভারতে যায় তিন দলের একটি টুর্নামেন্ট খেলতে।আফগানিস্তানের সাথে সিরিজ জিতলেও টানা ৭ম্যাচ হারে মেহরব অহিনের নেতৃত্বে থাকা দলটা।ফলে ভারতে অনূর্ধ্ব "এ" ও "বি" দলের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের আগে দলে আসে নতুন মুখ,বদলে যায় নেতৃত্ব।অহিন-আইচের জায়গায় অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য রকিবুল হাসানকে, সহ-অধিনায়কত্ব পান ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা বাঁহাতি ব্যাটার প্রান্তিক নওরোজ নাবিল।ভারতে ভালো অবস্থানে থেকে তিন দলের সিরিজ জিতে এশিয়া কাপেও পুচকে দুই দল,নেপাল ও কুয়েতের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করে যুবারা।

নেপাল ও কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে সহ-অধিনায়ক প্রান্তিক নাবিল এবং ওপেনিং ব্যাটার মাহফিজুল ইসলাম রবিন তুলে নেন একটি করে শতক।তবে করোনার হানায় শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ বাতিল এবং সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে শেষ হয় এশিয়া-শ্রেষ্ঠ্যত্বের লড়াই।

ভারসাম্য ফেরাতে ভারত সফরের আগেই রকিবুলের সাথে দলে ডাক পায়েছিলেন, যুব-বিশ্বকাপজয়ী আরেক সদস্য তানজিম সাকিব। এছাড়াও সেই দলে থেকে কোনো ম্যাচ না খেললেও রকিবুল-তনজিমের পরেই অভিজ্ঞতায় এগিয়ে ছিলেন প্রন্তুিক নাবিল ও মেহরব অহিন।তাইতো দলটাকে বেশ অভিজ্ঞ আর ভারসাম্যপূর্ণই মনে হয়েছিলো।

১৬ জানুয়ারি সেন্ট-কিটসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে  গ্রুপ-পর্ব শুরু করে বাংলাদেশ। তবে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় যুবারা।চরম  ব্যাটিং-বিপর্যয়ের এ ম্যাচে দলের ১১ নম্বর ব্যাটার রিপন মন্ডলের ৩৩রানের লড়াকু ইনিংসে ১৫.৪ ওভার না খেলে, মাত্র ৯৭ রানে অল-আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।যা অনূধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন। ফলে ৭ উইকেটের বড় ব্যাবধানে জয় পায় ইংলিশরা।
শেষ-আট নিশ্চিত করতে গ্রুপ-পর্বের পরের ম্যাচ দুটি জিততেই হতো,আর ক্রিকেট-সামর্থ্যে অনকটা পিছিয়ে থাকা কানাডা আর আরব-আমিরাতের বিপক্ষের ম্যাচে দাপুটে জয়ে ঘুরে দাড়ায় টাইগার বাহিনী। ৪৪.৫ ওভারে কানাডা ১৩৬ রানের টার্গেট দিলে ৮ উইকেটের জয় আসে।এ ম্যাচে ৪টি করে উইকেট নেন মেহরব অহিন ও রিপন মন্ডল। আরব-আমিরাতের বিপক্ষে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে টার্গেট দাড়ায় ১৪৯,তবে বৃষ্টি-বিঘ্নিত এ ম্যাচে টার্গেট আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে এলে ৯ উইকেটের বড় জয় পায় রকিবুলের দল।এ ম্যাচ যথেষ্ট আঁটোসাটো বোলিংয়ে ৮ ওভারে মাত্র ১৪ রান দেন পেসার আশিকুর জামান।গ্রুপ "এ" এর রানার্স-আপ হয়ে কোয়াটার ফাইনালে যায় দল।

২৯ জানুয়ারী কোয়াটার ফাইনালের  প্রতিপক্ষ,এবারের টুর্নামেন্টের ফেভারিট ভারত।কোয়াটার ফাইনালের আগে নাবিল-রকিবুলরা জানায়,ভারতে গিয়ে টুর্নামেন্ট জেতা ও এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। ভারতের শক্তিমত্তা-দূর্বলতাগুলো ভালোই জানা আছে তাদের,তাইতো ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার প্রত্যাশাও ব্যাক্ত করেছিলেন তারা।তবে সব আত্মবিশ্বাস-অভিজ্ঞতা যেন শুধু কাগজে-কলমেই,মাঠের খেলায় দেখা যায়নি যার ছিটেফোঁটাও।আর এ কারণেই কানাডা ও আরব-আমিরাতের বিপক্ষে বড় জয় পেলেও আইসিসির পূর্ণ সদস্য ভারতের মুখোমুখি হতে না হতেই বেড়িয়ে পড়ে দলের দূর্দশার করুণ চিত্র। 

২৯জানুয়ারী অ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমেই যেন একেরপর এক যাওয়ার-আসার মিছিলে যোগ দিতে থাকেন মাহফিজুল-নাবিল-ইফতেখাররা।ভারতীয় বোলারদের চোখে-চোখ রেখে ব্যাট চালাতে পারেন নি কেউই। ভারতের আগুন-ঝরা বোলিং তোপের মুখে মাত্র ৫৬রান তুলতেই নেই ৭ উইকেট।পেসার রবি 
কুমার একাই পরপর তিন টপ অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়ে ধ্বস নামিয়ে দেন ব্যাটিং লাইন-আপে।
৮ম উইকেটে অহিন-আশিকুর জুটির ৫০রানের পার্টনারশিপে ১১১রানের ছোট্টো পুঁজি পায় বাংলাদেশ। প্রথম ১২-১৩ ওভার দেখেশুনে খেলেও দুই উইকেট হারায় ভারত, তবে এরপরই হাত-খুলে খেলতে শুরু করে ভারতীয় ব্যাটাররা,একে একে বাংলাদেশের কফিনে সবকটি পরেক ঠুকে দিয়ে, অনুমতি-সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ২০২২আসরের চ্যাম্পিয়নরা।যে ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা ছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে সুখস্মৃতির,২০২২এর শেষ দেখায় তা হয়ে রইলো তিক্ততা আর আক্ষেপে ভরা।

শিরোপা স্বপ্নভঙ্গের পর পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্লে-অফের দুটি ম্যাচে ডানহাতি ব্যাটার আরিফুল ইসলাম টানা দুটি শতক পান।তবে দলগত পারফরম্যান্সের অভাবে হারতে হয় এ দুটি ম্যাচও।ফলে ৮ম অবস্থান নিয়েই দেশে পাড়ি জমায় টাইগার-যুবারা।

দলটার ব্যাটিং সামর্থ নিয়ে সংশয় ছিলো আগে থেকেই,তবুও অধিনায়কত্ব কাঁধে তুলে নিয়েই রকিবুল হাসান বলেছলেন,দলটা নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন আছে,দলের ব্যাটিং নিয়নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও বেশ কজন অলরাউন্ডার থাকায় সে ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। দলের কোচ নাভিদ নেওয়াজও দলটা নিয়ে বেচ আশাবাদী ছিলেন। তবে মাঠের মলিন পারফরম্যান্সে কোচ-অধিনায়কদের সেই আশ্বাসগুলো যেন শুধু আশ্বাসই রয়ে গেছে। 
বড় মঞ্চে,পূর্ণশক্তিমত্তার দলগুলোর সামনে মানিয়ে নিয়ে খেলার অভাবটা ছিলো চোখে পড়ার মতো,অভাব ছিলো দলীয় পারফরম্যান্সেরও।অর্জন বলতে শুধু ডানহাতি ব্যাটার  আরিফুলের টানা দুটি শতক নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২১৫রান এবং ১৫ গড়ে পেসার রিপন মন্ডলের ১৪উইকেট, এতটুকুই যা। তবে বিশ্বজয়ী আকবর-শরিফুলদের  উত্তরসূরীদের কাছে এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স মোটেই কাম্য নয়।
যে দলই জিতুক, দিন শেষে জিতে যায় প্রাণের খেলা ক্রিকেট।হেরে যাওয়া মানেই সবটা শেষ নয়।সুযোগ থাকে অনেক উন্নতির,নতুন করে স্বপ্ন দেখার।তাইতো সব ছাপিয়ে চরম-অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট ও ক্রিকেটাররা স্থান পায় শতকোটি ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ে। 

এইতো শুরু স্বপ্ন বোনার,নতুন করে স্বপ্ন দেখুক অপার সম্ভাবনাময় আরিফুল-রিপন-আইচ-রবিনরা...
বাংলাদেশের জন্য হতাশার ২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য হতাশার ২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ Reviewed by সম্পাদক on রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২২ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.