সানজিদা আক্তার,(রংপুর):
চারিপাশ হলুদ বালিতে ভরা, জ্বলজ্বলে রোদ, তাও হলুদ। এ যেন হলুদের রাজ্য। প্রখর তাপে ঘামতে ঘামতে তপ্ত বালিতে হাঁটছি আমি। কিন্তু, আমি কোথায়?
দূরে তিনকোনা হলুদ একটি পাথরের মত দেখা যাচ্ছে। একটি নয় আসলে অনেক গুলো ছোট বড় পাথর। কি নিখুঁত!
"ওগুলো আসলে পিরামিড!"
বেশ চমকে উঠলাম। আমি তো একা ছিলাম, তাহলে কথা বললো কে? পেছনে ঘুরে দেখি ঠিক আমার মত দেখতে একজন লোক, বয়স ষাটের কাছাকাছি, জ্ঞানী জ্ঞানী একটা ভাব আছে।
"তার মানে আমি মিসরে রয়েছি? পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীণ সপ্তমাশ্চর্যের সামনে আশ্চর্য হয়ে আমি দাঁড়িয়ে। ধাঁধিয়ে আছে চোখ। এই সেই পিরামিড, যা নিয়ে এত কল্পনা! হাজার হাজার বছরের রহস্যে ঘেরা একেকটি দূর্গ।"
সাথের লোকটি যে বাংলাভাষী খেয়াল হলো যখন তিনি নিজেই বলতে শুরু করলেন, " হাজার হাজার বছরই বটে! খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে তৈরী এসব। সবচেয়ে বড় পিরামিডের মধ্যে রয়েছে গিজা বা খুফুর পিরামিড। উচ্চতা ৪৮১ ফুট, জমি ৭৫৫ বর্গ ফুট। পিরামিডে ব্যবহৃত একেকটি পাথরের ওজন প্রায় ৬০ টন এবং দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট।"
পিরামিডের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছি গল্প শুনতে শুনতেই। লোকটির পেছন পেছন এগোতে থাকলাম। অনেকটা সম্মোহিতের মত তাকে অনুসরণ করছি। তার অবলীলায় বর্ণনা শুনে অপার বিষ্ময়ের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
"ভেতরে আসুন, এখানে থেকে থেকেই অনেক গুলো ঘর। যেগুলোতে মমি রাখা আছে। মিসরীয় রাজা যাদের ফারাও ও বলা হত তাদের মৃতদেহের মমি। আসলে মিসরীয়দের মধ্যে মৃত্যু নিয়ে অনেক কুসংস্কার ছিলো। তারা মনে করতো মৃত্যুর পরই জীবন শেষ হয়ে যায়না। মৃত ব্যাক্তির ও পরের জীবনকে উপভোগ করার প্রয়োজন পরে। তাই তারা দেহকে মমি বানিয়ে রাখতো। মমি করার প্রক্রিয়াটিও বেশ। দেহের ভেতর হৃদয় টি রেখে বাকী সব বের করে ফেলে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হত কফিনে। এই আয়োজনকে সনপূর্ণ করতে তারা মমির সাথে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, মূল্যবান অলংকার, দেবতাদের মূর্তি, পোষা প্রাণী ও পাখিও মমি করে রেখে দিত। আর মমি তত্ত্বাবধানে থাকতো লোকজন।"
ভদ্রলোক থেমে গেলেন। আমি তখন মমির কফিন দেখছি। একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। সাথে ভয় ও। কুলকুল করে ঘামছিলাম। একরকম ঘোরের মাঝে আবার চমকে উঠলাম সেই লোকটির ভারী কন্ঠে। "জানেন, অনেকেই বলে পিরামিড মানুষের তৈরী নয়।" আমিও মনে মনে তাই ভাবছিলাম। এমন নিখুঁত মাপ আর একেকটি ১০-১৫ টন এর হাজার হাজার পাথর দিয়ে গড়া এই দূর্গ এমনি এমনি হয়নি। যেন কোন জাদুমন্ত্রের দ্বারা শূণ্যে উঠিয়ে পরপর সাজানো। খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার অব্দে তখন না ছিল অন্য যন্ত্র, না ছিল ক্রেন, জনবলই ছিল মূল। তাই পিরামিড দেখে খানিক্ষণের জন্য জাদুমন্ত্রে বিশ্বাস করা যেতেই পারে।
"সমাধিক্ষেত্র থেকে বের হলেই দেখবেন এই বিস্তৃত অঞ্চল শুধু পিরামিড নয়, আছে শ্রমিকদের গ্রাম ও। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, দীর্ঘ ৫০০০ বছরে পিরামিডগুলো হারিয়েছে ২৬ মিটার উচ্চতা, তবুও এখনও কত অক্ষত এবং চকচকে।"
আমি যত ঘুরছি তত অবাক হচ্ছি। লোকটি চমৎকার বাংলা বলেন। কিন্তু একটা বিষ্ময় থেকেই যাচ্ছে, তিনি কেন আমাকেই এসব জানাচ্ছেন!
আবার বললেন, "আপনি কি খুব শান্তি অনুভূত করছেন?"
ভয়ে ছিলাম, কিন্তু সত্যিই তো! মানসিকভাবে অনেক হালকা লাগছে। বললাম, "হ্যাঁ, অনেকটা শান্ত লাগছে।"
"এটিই পিরামিডের সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো পিরামিডের গঠনে একটি শক্তি নিহিত আছে। যা কসমিক এনার্জি আর মহাজাগতিক রশ্মি শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে পিরামিডের ভিতরে অবস্থান করলে স্বাস্থ্য ও মন ভালো হয়। রোগীদের রোগ উপশম হয়, শারিরীক ভারসম্য বজায় থাকে। এ কারণে কানাডিয়ান একটি হাসপাতাল পিরামিডের প্রতিলিপি তৈরী করে এবং রোগীদের খুব তাড়াতাড়ি ব্যাথাজাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। অদ্ভুত হলেও সত্যি যে, পিরামিডের ভেতরে, বাইরের চেয়েও তিনগুন বেশি সময় খাদ্য ও হাজার হাজার বছর ধরেবশস্য সংরক্ষণ করা সম্ভব!"
কথা শেষ হতেই দুম করে একটা শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখলাম পিরামিডের দেয়ালে ফাটল ধরেছে! সাথের লোকটি আশেপাশের কোথাও নেই! আরে! এখন আমার কি হবে? কান্না আসছে আমার। হঠাৎ পিঠে একটা ঠান্ডা স্পর্শ পেলাম। মমি টমি জেগে ওঠেনি তো! কেঁপে উঠলো শরিরটা। পড়ে গেলাম, জ্ঞান হারিয়ে যাচ্ছিলাম প্রায়।
"এই ছেলে, আর কত ঘুমাবি?"
"এ্যাঁ! আমি কোথায়?"
চোখ খুলে দেখি আমি বাসায়, ঘরের মেঝেতে পরে আছি। শরীরের ওপর বালিশগুলো পিরামিডের মত জমে রয়েছে। পিঠে হাত দিয়ে মমি আমায় ডাকছে। ভুল বললাম, মমি নয় মা ডাকছে ঘুম থেকে ওঠার জন্য। আমি আসলে আগের রাতে সারারাত পিরামিড নিয়ে পড়েছিলাম যা স্বপ্নে দেখেছি। যাক ভালই হলো, স্বপ্নেই মিসরের পিরামিড ঘুরে আসা হয়ে গেলো।
ত্রিকোণ আশ্চর্য।
Reviewed by সম্পাদক
on
মঙ্গলবার, আগস্ট ২৫, ২০২০
Rating:
Reviewed by সম্পাদক
on
মঙ্গলবার, আগস্ট ২৫, ২০২০
Rating:
