জেবা সামিহা,(রংপুর):
মুনাফা অর্জনের জন্যে আইনত বৈধ সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসা বলে। হ্যাঁ গত চার বছর ধরে ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করে ব্যবসাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে শিখেছি। ব্যবসায় শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো ব্যবস্থাপনা আর বিপণন। ব্যবস্থাপনা আর বিপণন বিষয়ের বইয়ে পড়েছি এ দুটো জিনিস নাকি সার্বজনীন ও সবখানে আছে। এবং এগুলোর ব্যাখ্যাও রয়েছে। তবে আমি বলতে ব্যবসায় ও সবখানে আছে।
হাহাহা... একটু মজা করেই ব্যবস্থাপনার আর বিপণনের কথা বললাম। অন্যকিছু না।
ব্যবসা যে সবখানে আছে এটা বুঝতে ব্যবস্থাপনা আর বিপণন পড়া লাগে না। যদি কোনো মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যদি সজাগ থাকে তবে সে এমনিতেই বুঝতে পারে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে লাভজনক ও সার্বজনীন স্বকৃত ব্যবসা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবসা। আর এ ব্যবসায়ের পণ্য হচ্ছে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকগণ। আর এই পণ্যগুলো নিয়ে কারা ব্যবসা করে, জানেন? এসমাজের কিছু উচ্চশিক্ষিত সম্মানিত মানুষ। যাদের আমরা খুব শ্রদ্ধা আর সম্মান করি। এবং এদের সাথে রয়েছে কিছু হবু উচ্চশিক্ষিত মানুষ। মানে যারা এখনো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়নি, ভবিষ্যৎ এ হবে।
শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করা শুধু কোনো কোচিং, গাইড বই, প্রাইভেট পড়ানো এসবের মধ্যে আটকে নেই। বরং শিক্ষার প্রতিটা স্তরে স্তরে রয়েছে লাভজনক ব্যবসা। প্রথমে আসি একটি শিশুর বর্ণমালা পরিচয়ের স্তরে। যে বর্ণমালাগুলো বাড়িতে মায়ের সাথে খেলতে খেলতে শিখা যায় সেগুলো শিখানোর জন্যে নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। আর অভিভাবকরা ভাবছেন সেসব প্রতিষ্ঠানে মনে হয় অভিভাবকদের থেকে আরও ভালো এবং বেশি জিনিস শিখানো হবে। তাই তারাও এসব প্রতিষ্ঠানের পিছু ছুটছেন।
এরপরের স্তর হলো প্রথম শ্রেনি অথবা তৃতীয় শ্রেনিতে ভর্তি। এর জন্যে শহরের সবচেয়ে ভালো বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া লাগবে। নাহলে শিক্ষার্থী মানুষ হবে না। কিন্তু সেখানে ভর্তি হতে গেলে কি করা লাগবে? ওমুক কোচিং করা লাগবে। ওমুক বই পড়া লাগবে।
এরপরের শ্রেনিগুলো থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ব্যবসায়ের সুযোগ গুলো হলো এই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া লাগবে তো ঐ স্যারের কোচিং এ পড়া লাগবে। নাহলে এ+ হবে না। নয়তো পরিক্ষায় পাসই হবে না।
উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর সবচেয়ে বড়, লক্ষ্যনীয় এবং মুনাফাভোগী ব্যবসায় হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ব্যবসায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে সেরা। এটাতে ভর্তি হতে না পারলে পুরা জিবনটাই বৃথা। সমাজে আর আমি মানুষ বলেই গণ্যই হবো না। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার জন্যে একজন শিক্ষার্থীকে যা যা করা প্রয়োজন তার থেকে আরও বেশি কিছুই করে। ব্যবসায়ের হেব্বি সুযোগ এখানে।
আমাদের মাননীয় দেশ প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রী অনেক চেষ্টা করছেন শিক্ষা ক্ষেত্রে বাণিজ্য বন্ধ করার জন্যে। অনেক আইন করছেন এবং তা প্রয়োগ করছেন। কিন্তু তারপরেও তৃণমূল পর্যায়ে তাতে কতটুকু লাভ হচ্ছে? লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না।
একটু খুঁজে দেখি সমস্যা কোথায়। সমস্যাটা হলো শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর so called society এর। যারা শুধু মাত্র বোঝে ভালো প্রতিষ্ঠান আর ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থী গুলোই মানুষ। বাকি গুলা পুরাই অমানুষ। তারাই এই সমস্যার মূলে।
একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কিছু আসন সংখ্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেই আসন সংখ্যাগুলো যারা পাবে তারাই মেধাবি বাকি গুলা না এমন কোনো কথা নাই। নামকরা ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারলেই যে জিবনে নিশ্চিত ক্যারিয়ার হবে নতুবা নয় এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমি বলবো যারা এমন ধারণাকে লালিত করেন তারা এই পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মানুষ। নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা জিবনে কিছুই করে পারেনি। আর বেশি টাকা উপার্জন করতে পারা ক্যারিয়ারটাই যে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তা কিন্তু নয়। কারন টাকা প্রয়োজন মেটাতে পারে, মনের মতো সুখ আনতে পারেনা।
যতদিন না দৃষ্টিভঙ্গি আর চিন্তাধারা বদলানো যাচ্ছে আমার মনে হয়না শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করা খুব একটা সম্ভব হবে। অবশ্য আমি কাকে দোষারোপ করবো? শিক্ষার্থীরা তো জ্ঞান অর্জনের জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় না। তারা তো টাকা উপার্জনের নিশ্চিত পথ এবং সমাজে ভালো হওয়ার জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। আর যারা শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করছেন তারা হয় পেটের দায়ে নাহয় বেশি টাকা উপার্জনের জন্যে এসব করছেন। একবার বিবেককে প্রশ্ন করুন আপনারা। যা করছেন তা কতটুকু যৌক্তিক? যদি আপনাদের বিবেক কোনো কথা না বলে তবে আমার আর কিছু বলার নেই।
ফিচার: শিক্ষা আর ব্যবসা।
Reviewed by সম্পাদক
on
বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০১৯
Rating: