জেবা সামিহা,(রংপুর):
এইতো কয়েকমাস আগে যখন কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলাম তখন দেখি একটা ফার্ণিচারের দোকানে এক বালক কাজ করছে। হ্যাঁ, তাকে আমি বালক বলবো কারন তাকে দেখে মনে হলো সে ৭-৮ বছরের হবে। দেখছি সে দোকানের জিনিষপত্রগুলো পরিষ্কার করছে। এতটুকু ছেলে কাজ করছে! খুব অবাক হইনি আমি। কারন এ চিত্র আজ অহরহ দেখা যায়। কিন্তু ছেলেটাকে দেখে খুব মায়া ও হচ্ছিলো। যদিও সে ময়লা আর ছেঁড়া কাপড় পরে ছিলো তবুও তার চেহারায় এক মায়াবী ভাব ছিলো। এরপর প্রায়ই ঐ দোকানের সামন দিয়ে যাতায়াত করার সময় ও ওকে দেখি। যে সময় প্রতিটা স্কুলে ক্লাস হয় সে সময়টাতেও ও কাজ করে দোকানে। খুব খারাপ লাগলো এটা দেখে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর সাথে গিয়ে কিছু গল্প করি। ওকে ওর স্কুলের কথা, ওর পড়ালেখার কথা, ওর পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করি। তারপর ভাবলাম না থাক। গল্পটা ত একি হবে। মাঝেমাঝে ঐ দোকানের মালিকের উপর প্রচুর রাগ হতো, কোন বিবেকে ঐ বাচ্চাটাকে কাজে নিয়েছে! তারপর ভাবলাম গল্পটা একি হবে।
আর সেই চেনা জানা গল্পটা হলো - বাচ্চাটা কোনো বস্তি বা খুব গরিব পরিবার বা অসচেতন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে। তারপর বাচ্চাটার বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছে অথবা পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটি উপার্জন করতে পারছেনা তাই বাচ্চাটাকে উপার্জন করতে হচ্ছে। হুহ!!! দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলি। আর ভাবতে থাকি এই শিশুশ্রম কি বন্ধ হবে না?
অনেক চিন্তা ভাবনার পর মনে হয় যতদিন না শিশুশ্রমিকদের একটা নিশ্চিত, সচেতন পরিবার উপহার দেয়া না যায় ততদিন পর্যন্ত শিশুশ্রম ঠেকানা মুশকিল। সে যতই আইন কানুন থাকুক না কেন।
ব্যক্তিগতভাবেই একটা বস্তিতে গিয়েছিলাম তাদের জীবনযাপনের ধরণ জানতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম তাদের কাছে শিশুশ্রম বলে কিছু নেই। সব বয়সী শ্রমিকরাই সমান। সেই বস্তিতে যখন থেকে বাচ্চারা (ছেলে) বুঝতে শিখে তখন থেকেই তাকে কাজ করতে হবে এই ধারণা দেয়া হয়। এরপর মোটামুটি ৭-৮ বছরে সেই শিশুগুলো মানুষের দোকানে থেকে অথবা ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে অথবা ফেরি করে তারা ভালো উপার্জন করে। বস্তির মানুষগুলোকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম "কেনো তাদের দিয়ে এত অল্প বয়সে কাজ করান?" তারা জবাবে বললো "ছেলে হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে আর কাজ করবে না সেটা কেমন কথা। বাবার ঘাড়ের উপর বসে বসে খাবে সেটা কি হয়! তাছাড়া আমাদের আর্থিক অবস্থা এত ভালো না যে বসে বসে খাওয়াবো।" তারপরেও তাদের বললাম সন্তানকে লেখাপড়া করালে বর্তমানের থেকেও বেশি উপার্জন করবে। কিন্তু তারা এটা মানতে নারাজ। আসলে যারা বুঝে তাদের আর কি বুঝাবো।
একটি শিশুকে শ্রমিক বানাতে তার সমাজের ভূমিকাও কম না। একটি শিশু জন্ম নেয়ার পর থেকে যদি দেখে তার চারপাশে তার বয়সিরা কাজ করছে, তাহলে সেই শিশুর মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কিভাবে জন্মাবে?
আচ্ছা, তাহলে কি যারা শিশুদের অল্প মজুরী তে কাজ করিয়ে নিচ্ছে তারা আগে থেকেই দেশের বেকার সমস্যা দূরকরণে উঠে পড়ে লেগেছে? যদি তাই হয় তাহলে তারা কি ভাবতে পারছে না যে এতে একটা শিশুর প্রাণোচ্ছল হাসি হারিয়ে যায়? এভাবে নিষ্পাপ, দামী হাসি নষ্ট করলে লাল সবুজের বাংলাদেশ কিভাবে হাসবে?
লাল সবুজের বাংলাদেশ হাসবে কিভাবে?
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
Rating:
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
Rating:
