মিসবাহ সামাদ,(সিলেট):
ছয় বছর বয়সে মাকে যেদিন দুধের সাথে পানি মেশাতে দেখেছিলেন সেদিন রোমেলু লুকাকু বুঝেছিলেন আসলেই কতটা গরীব তাঁরা! আরো বুঝলেন, যেদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখলেন, আলো জ্বলছে না - এভাবে দু-তিন সপ্তাহ কেটে যেত বিদ্যুৎ ছাড়া। আরো বুঝলেন, যেদিন স্নানঘরে গরম পানির অভাবে মায়ের গরম করে দেয়া পানি কেটলি থেকে কাপ দিয়ে মাথায় ঢেলে স্নান করতে শুরু করলেন। বুঝলেন, যখন গলির মোড়ের দোকান থেকে পাউরুটি ‘ধার’ করতে শুরু করে দিলেন মা। মায়ের অসহায় চেহারা দেখেও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করতেন ছোট্ট লুকাকু। বাবা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। তবে বয়স হয়ে গেছে, ফুটবল থেকে আয় রোজগার নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়। তারপরও ফুটবলারই হতে চাইতেন লুকাকু। তাঁর ভাষায়, ‘বেলজিয়ামের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হতে চাইতাম আমি। ভালো ফুটবলার নয়। বড় ফুটবলার নয়। সবচেয়ে সেরা।’
বুকের মধ্যে ছাঁইচাপা আগুন নিয়ে একেবারেই অল্প বয়সে স্থানীয় লিগে খেলতে শুরু করেন লুকাকু। নিজের বুট ছিল না তাই বাবার বুট পায়ে দিয়েই ১২ বছর বয়সেই ৩৬ খেলায় করে করে ফেলেন ৭৬টি গোল। মায়ের বাবা, মানে নানাভাই ছিলেন লুকাকুর সবচেয়ে আপনজনদের একজন। থাকতেন কঙ্গোতে, যেটি লুকাকুর বাবা-মার আদি বাসস্থান। ৭৬ গোল করার পর একদিন নানাকে ফোন করলেন সুসংবাদটা দেয়ার জন্য। নানা খুশি হলেন। তবে বললেন, ‘আমার জন্য একটা কাজ করতে পারবে রম?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘আমার মেয়েটাকে দেখে রেখ। প্লিজ?’
নানার কথাকে সেদিন দুর্বোধ্য ঠেকেছিল লুকাকুর কাছে। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর মেয়েকে দেখে রাখবেন। এর ঠিক পাঁচ দিন পর মারা যান লুকাকুর নানা।
এরপর মিউজ আর রাইন নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। আন্ডারলেখট, চেলসি, এভারটন হয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থিতু হয়েছেন লুকাকু। নান্দনিক ফুটবলে মন রাঙিয়েছেন সবার, দেশের হয়ে মাথায় পরেছেন গৌরবমুকুট। আর টাকা? রেকর্ড ৯০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি-তে এভারটন থেকে এসেছেন ম্যান ইউতে। সাপ্তাহিক বেতন? দুই কোটি টাকা।
অঢেল টাকা আর বিশ্বজোড়া খ্যাতিও লুকাকুকে এখনও সেই ছোট্ট লুকাকুই রেখেছে। ‘অর্থ নয়, খ্যাতি নয়, প্রতিপত্তি নয়’ – লুকাকুর সবচেয়ে বড় তৃপ্তি তাঁর মাতামহের কাছে দেয়া সেই প্রুতিশ্রুতিটি রাখতে পারা। লুকাকুর ভাষায়, ‘আমার ইচ্ছে করে আর একবার, মাত্র একবার নানাভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে। তাঁকে বলতে, ‘দেখেছ? তোমার মেয়েকে আমি সুখে রেখেছি। আমাদের ঘরে আর ইঁদুর ঢোকে না। আমাদের আর মেঝেতে ঘুমাতে হয় না।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়া এক দরিদ্র পরিবারের ৬বছর বয়সী ছোট্ট শিশুটি যদি তার লক্ষ্যে পৌছাতে পারে, তাহলে আমরা তরুণরা কেনো পারবোনা আমাদের জীবনের সঠিক গন্তব্যে পৌছাতে??
"রোমেলু লুকাকু" -এক দরিদ্র যোদ্ধার নাম।
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, নভেম্বর ০২, ২০১৮
Rating:
Reviewed by সম্পাদক
on
শুক্রবার, নভেম্বর ০২, ২০১৮
Rating:

